ইবাদত কাকে বলে: আল্লাহ তাআলার আনুগত্য এবং গোলামীর মাধ্যমে ইসলামের যাবতীয় বিধি-বিধান মেনে সন্তুষ্টির জন্য আমল করাকে ইবাদত বলে। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যে সকল কাজ, জিকির ও আমল করা হয় সেগুলোর সমষ্টি হচ্ছে ইবাদত।
বইয়ের সংজ্ঞা: ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়, দৈনন্দিন জীবনের যেসকল কাজ আল্লাহ তাআলার আদেশ-নিষেধ, বিধি-বিধান এবং সন্তুষ্টি আদায়ের জন্য করা হয় তাকে ইবাদত বলা হয়।
আর এই ইবাদতের সংজ্ঞা গুলোই হচ্ছে মূলত ইবাদতের পরিচয় যেগুলো দ্বারা আমরা ইবাদতের কাঠামো বুঝতে পারি।
আমরা মূলত আল্লাহ তায়ালার গোলামী করে থাকি এবং তিনাকে রাজি খুশি করার জন্য ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত এবং নফল আমল করে থাকি। এবং তিনাকে সন্তুষ্ট করার জন্য আমরা যে সকল আমল করে থাকি সে সকল আমলকে ইবাদত বলা হয়।

আমরা সর্বক্ষেত্রেই জীবনে কল্যাণ লাভ করার জন্য আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্টি অর্জনের দিকে অনেক বেশি আগ্রহী হই। এবং আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি আদায়ের জন্য আমরা যে সকল কাজ কিংবা আমল কিংবা জিকির করে থাকে সেগুলোকে বলা হয় ইবাদত।
তবে অবশ্যই এ কথা মনে রাখবেন যে, ইবাদত পালন করার জন্য আপনাকে ইসলামের যাবতীয় বিধি-বিধান অবলম্বন করতে হবে।
এর অর্থ হলো আপনাকে ইসলাম ধর্মের সকল বিষয় সম্পর্কে অবগত থেকে সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে হবে ইবাদত করার জন্য।
আপনি যখন ইসলামের যাবতীয় বিধিবিধান অবলম্বন করে ইবাদত বা আমল করবেন তখন আল্লাহ তা’আলা আপনার উপর অনেক সন্তুষ্ট হবে। ইসলামের যাবতীয় বিধি-বিধান অবলম্বন করার মাধ্যমে আপনি প্রকৃত মুমিন হয়ে নিজেকে আদর্শভাবে পরিচালনা করতে পারবেন।
ইবাদতের সংজ্ঞা ও উদাহরণ
আমরা ইতিমধ্যে ইবাদত সংজ্ঞা উল্লেখ করেছি যেখান থেকে আপনারা বুঝতে পারবেন যে ইবাদত কাকে বলে ভাই ইবাদত কি। ইবাদতের আরো একটি অনেক ছোট সংজ্ঞা সহজ ভাষায় উল্লেখ করা যেতে পারে যা আপনার জানা দরকার।
যেকোনো কাজ আল্লাহ তায়ালার বিধি-বিধান ও আদেশ-নিষেধ অনুযায়ী করার নামই হচ্ছে ইবাদত। এই ছিল ইবাদত কাকে বলে এর একটি সংজ্ঞা।
ইবাদতের উদাহরণ সমূহ:
- সত্য কথা বলা, মিথ্যাকে প্রশ্রয় না দেওয়া এবং সততার পথে চলা।
- সুদ-ঘুষ সাথে বিরত থাকা, জুয়ার টাকা থেকে নিজেকে হেফাজত রাখা।
- যেকোনো কাজ শুরু করার পূর্বে বিসমিল্লাহ পাঠ করা, কাজ করতে করতে তাসবিহ পড়া।
- সালাত আদায় করা, সালাত আদায়ের পূর্বে আযান দেওয়া, ওযু করা।
- অন্যকে সাহায্য করা, দরিদ্রদের দেখে দুঃখ পোষণ করা।
- শ্রমিককে তার পারিশ্রমিক উচিত সময় প্রদান করা, শ্রমিকের হক পূর্ণ করা।
- প্রতিবেশীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা, কারো মনে আঘাত না দেওয়া।
- দুর্নীতিযুক্ত এলাকা পরিহার করা এবং দুর্নীতিতে না জরানো।
- এতিম বাচ্চাদের স্নেহ, যত্ন এবং আদর করা, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহায্য করা।
- নিজের কথাবার্তার দ্বারা অন্যকে দুঃখ না দেওয়া, অন্যের দুঃখে নিজে দুঃখ পাওয়া।
- প্রতিবেশীর বিপদে এগিয়ে যাওয়া, প্রতিবেশীর দেখাশোনা করা।
- ওয়াদা দিয়ে ওয়াদা পালন করা, আমানতের খেয়ানত না করা।
- মদ্যপান থেকে বিরত থাকা, হালাল-হারাম বেচে খাওয়া।
- অন্যকে দুশ্চিন্তা করে রাখার চেষ্টা করা এবং শান্তি প্রদান করতে চেষ্টা করা।
- সামর্থ্য থাকলে দান করা, যাকাত দেওয়া এবং দুঃখীকে সাহায্য করা।
- ইসলামী শরীয়তে যাবতীয় বিধি-বিধান মেনে চলা, সর্বাপেক্ষা ইসলামকে প্রাধান্য দেওয়া।
- আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, ফেরেশতাগণের প্রতি বিশ্বাস এবং অন্যান্য মাখলুকাতের প্রতি বিশ্বাস আনা।
- আল্লাহর দেওয়া প্রতিটি বিধান, প্রতিটি কিতাব এবং প্রতিটি পদক্ষেপ এর উপর বিশ্বাস রাখা।
- ইসলামের আহকাম মেনে চলা, সুন্নত, নফল, ওয়াজিব এবং ফরজ সঠিক মতো আদায় করা।
এগুলো হলো ইবাদতের কিছু উদাহরণ এবং এই কাজগুলো করার মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন করে ইবাদত করতে পারি। আপনিও যদি আল্লাহ তাআলার ইবাদত করতে চান এবং সন্তুষ্টি অর্জন করতে চান তাহলে উপরোক্ত কাজগুলো করুন।
শেষ কথা:
ইবাদত কাকে বলে বা ইবাদতের সংজ্ঞা নিয়ে যতগুলো তথ্য জানার দরকার ছিল তার প্রত্যেকটি উল্লেখ করেছি। আপনি যদি ইবাদত সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করতে চান তাহলে অবশ্যই এর উদাহরণ বা কাজ সম্পর্কে জানা দরকার ছিল যা উল্লেখ করেছি।
ইবাদত সম্পূর্ণরূপে আল্লাহ তাআলা কে রাজি খুশি করার উদ্দেশ্যে আমরা আদায় করি এবং সেই সাথে জীবনে কল্যাণ লাভ করতে পারি।
আবার এমন কিছু ইবাদত রয়েছে যেগুলো আমরা আল্লাহ এবং প্রিয় নবী উভয়ের সন্তুষ্টির জন্য আদায় করে থাকে।
কিছু কিছু সুন্নত আমল বা এবাদত রয়েছে যেগুলো আমরা আমাদের প্রিয় নবীর সন্তুষ্টি এবং মর্যাদা রক্ষা করতে আবার আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করতে আদায় করে। আর অবশ্যই আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করার জন্য আমাদেরকে আমাদের প্রিয় নবীকে সন্তুষ্ট রাখতে হবে বা প্রিয় নবীকে মর্যাদা দিতে হবে।
আপনি আমি যদি ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত হয় জীবন পরিচালনা করতে পারে তাহলে অবশ্যই আল্লাহ আমাদের উপর সন্তুষ্ট হবেন।
সেই সাথে আমাদের উপর রহমত নাযিল করবেন যার মাধ্যমে আমরা ইহকাল এবং পরকাল উভয় স্থানে আল্লাহর প্রিয় পাত্র হতে পারব।
ইবাদত করার অর্থ যে কাজ বা আমল হবে এমনটা না বরং যদি আল্লাহর নিকট আমাদের পূর্বের কৃতকর্মের গুনাহ মাফ চাই।
সেক্ষেত্রে এটি একটি ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং সেই সাথে আমরা আমাদের পূর্বের গ্রহণ মাফ করে নিতে পারব।
আর অবশ্যই যদি আপনি আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে চাই তাহলে আমাদেরকে আমাদের পূর্বের গুনাহ গুলো আল্লাহর নিকট হতে মাফ করে নিতে হবে। আল্লাহ তাআলার দয়া ও ক্ষমা অসীম তাই আমরা চাওয়া মাত্র আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে অবশ্যই ক্ষমা করে দিবেন এবং এটি ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত।
আরও পড়ুন: আকাইদ কাকে বলে?