ইন্টারনেট কি? ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে?

ইন্টারনেট কি: ইন্টারনেট হচ্ছে একটি কম্পিউটারের সাথে আরেকটি কম্পিউটারের মধ্যে সংযোগ এবং যোগাযোগ। প্রেরকের কম্পিউটারের সাথে প্রাপক কম্পিউটারে তথ্য আদান প্রদান করার পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থার নাম হলো ইন্টারনেট।

এক অক্ষরে বলতে গেলে ইন্টারনেট হল দ্রুত গতিতে যোগাযোগ সম্পন্ন করার একটি সহজ মাধ্যম ও প্রক্রিয়া।

খুব সহজ ভাবে যদি বুঝতে চান তাহলে, আমরা হাতে যে স্মার্টফোনটি ব্যবহার করে থাকে এই স্মার্টফোনটি হচ্ছে একটি কম্পিউটার এবং আমরা স্মার্টফোন ব্যবহার করে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম অথবা জিমেইলের মত প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বন্ধুদের সাথে তথ্য আদান প্রদান করি।

আর এক্ষেত্রে আপনার আমার স্মার্টফোনটি হলো প্রেরক কম্পিউটার এবং আপনার বন্ধুর স্মার্টফোনটি হলো প্রাপক কম্পিউটার।

অতীতের যখন আমরা বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করতে চাইতাম তাহলে পোস্ট অফিস ব্যবহার করতাম পোস্ট করার জন্য।

ইন্টারনেট কি
ইন্টারনেট কি?

বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবস্থা এটিকে সুবিধা করে তুলেছে এবং যেকোনো মুহূর্তে খুবই দ্রুত যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেছে। একটি কম্পিউটারের সাথে অন্য আরেকটি কম্পিউটারের যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের মাধ্যম ব্যবহার হয়ে থাকে এবং এই মাধ্যমগুলোকে একত্রে ইন্টারনেট বলা হয়।

এক কম্পিউটারের সাথে আরেক কম্পিউটারের যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রধানত দুই ধরনের মাধ্যম ব্যবহার করা হয়ে থাকে যথা:

  1. তারযুক্ত মাধ্যম বা কেবল সিস্টেম কমিউনিকেশন।
  2. তারবিহীন মাধ্যম বা ওয়ারলেস সিস্টেম কমিউনিকেশন।

তারযুক্ত মাধ্যম

এক কম্পিউটারের সাথে অন্য কম্পিউটার অপটিক্যাল ফাইবার দ্বারা যুক্ত হয় সংযোগ স্থাপন করলে সে সংযোগকে তারযুক্ত সংযোগ বলা হয়।

এবং এক্ষেত্রে ইন্টারনেটের কোন প্রয়োজন হয় না এবং ইন্টারনেটের কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা ধরন পরিলক্ষিত হয় না।

তারবিহীন মাধ্যম

এক কম্পিউটারের সাথে অন্য কম্পিউটারের মধ্যে কোন অপটিক্যাল ফাইবার ছাড়াই সরাসরি অসীম দূরত্বের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করার প্রক্রিয়া হচ্ছে তারবিহীন যোগাযোগ মাধ্যম। এক্ষেত্রে দুই কম্পিউটারের মধ্যে বা একাধিক কম্পিউটারের মধ্যে সংযোগ ইচ্ছা পড়ার ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের প্রয়োজন হয় এবং এক্ষেত্রে ইন্টারনেটের গুরুত্ব রয়েছে অপরিসীম।

যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ইন্টারনেট ব্যবস্থা অনেক বেশি উন্নত কেননা, ইহার মাধ্যমে খুব অল্প সময় দ্রুত যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়।

ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে

ইন্টারনেট সম্পূর্ণরূপে তারবিহীন যোগাযোগ হিসেবে কাজ করে এবং এটিকে বেতার কেন্দ্র যোগাযোগ ব্যবস্থা হিসেবে পরিচিতি প্রদান করা হয়। ইন্টারনেট বা তারবিহীন যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ।

তারবিহীন বা ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থার কয়েকটি উন্নত সংস্করণ হল WiFi, LiFi এবং 5G মতো উন্নত মানের ইন্টারনেট সংযোগ।

ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থা প্রত্যেকটি ডিভাইসে নিজস্ব নাম্বার বা আইপি রয়েছে এবং একে আমরা ঠিকানা বলে চিহ্নিত করে থাকি।

একে বলা হয় ইন্টারনেট প্রটোকল বা আইপি এড্রেস যা হচ্ছে প্রত্যেকটি ডিভাইসের পার্সোনাল ঠিকানা।

এই আইপি এড্রেস বা ইন্টারনেট প্রটোকল এর মাধ্যমে প্রেরক এবং প্রাপক উভয় ডিভাইসকে সনাক্ত করা হয় এবং তাদের মাঝে যোগাযোগ স্থাপন করার সুযোগ তৈরি করা হয়। এক্ষেত্রে মনে রাখবেন কম্পিউটার কিংবা অন্যান্য ডিভাইস তথ্য আদান প্রদান করার সময় কন্ঠে লেখা এবং কোনটি ছবি এবং কোনটির ভিডিও তা কিছুই বোঝেনা।

কম্পিউটার চ্যানেলে শুধুমাত্র কোড এবং পুরো কম্পিউটার তার নিজস্ব প্রোগ্রাম বা কোডিং এর উপর নির্ভর করে সকল প্রকার কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তাই প্রারক হতে পাঠানো যেকোনো ধরনের তথ্য সেটা হতে পারে ছবি, টেক্সট কিংবা ভিডিও তা প্রথমে নির্দিষ্ট কিছু প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ এ রূপান্তর করে ফেলে।

এক একটি ছবি কিংবা ভিডিও পরিবেশনের জন্য প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ বা কোড গুলো হয়ে থাকে অনেক বেশি বড় বড়।

এত বড় বড় কোড গুলো কিংবা তথ্যগুলো আদান প্রদান করার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট যোগাযোগ রাস্তার মধ্যে জ্যামের সৃষ্টি হতে পারে।

এর ফলে দেখা দিবে যোগাযোগ ব্যবস্থা চলে এসেছে অনেক ধীরগতিতে, তাই প্রথমে সেই কোড গুলোকে ভেঙ্গে আলাদা আলাদা পথে প্রাপকের আইপি এড্রেসে পৌঁছে দেওয়া হয়। এরপর বিচ্ছিন্নভাবে যাওয়া কোড গুলো পরস্পরের সঙ্গে পুনরায় যুক্ত হয় আপনার প্রাপকের আইপি অ্যাড্রেস এ এবং রূপ নিয়ে পরিপূর্ণ তথ্যের।

ইন্টারনেটে চলার এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় প্যাকেট সুইচিং, যেহেতু তথ্যগুলো বিচ্ছিন্নভাবে পরিবহন হয় প্রাপকের আইপি অ্যাড্রেসের সেহেতু যোগাযোগ ব্যবস্থা হয়ে অনেক বেশি দ্রুত। ইন্টারনেট কি আশা করি ধারণা পেয়ে গেছেন খুব সহজে।

ইন্টারনেট সার্ভার কিভাবে কাজ করে

ইন্টারনেটে চলাচল করার জন্য এবং ইন্টারনেটকে পরিপূর্ণ সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কিছু সার্ভার কাজ করে থাকে।

এই সার্ভারগুলোর মাধ্যমে ইন্টারনেট পরিপূর্ণরূপে তার কর্মদক্ষতা ফিরে পায় এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ করা থাকে।

পৃথিবীর ইন্টারনেট ব্যবস্থার সক্রিয় রাখতে পুরো পৃথিবী জুড়ে কাজ করে যাচ্ছে লক্ষ্য কোটি কিংবা অসংখ্য কম্পিউটার।

এগুলোর মধ্যে কিছু কম্পিউটার রয়েছে যারা ইন্টারনেটে ফাইল সংরক্ষণ করতে কাজ করে এবং গ্রাহকের চাহিদায় সকল ফাইল পরিবেশন করে থাকে।

ইন্টারনেটের এই সকল সার্ভারকে বলা হয় ফাইল সার্ভার বা ডাটা সার্ভার বা হোস্টিং সার্ভার। এই মুহূর্তে আপনি যে পোস্টটি পড়ছেন তা গুগলের সার্ভারে অর্থাৎ ফাইল সার্ভারে সংরক্ষিত আছে এবং আপনাকে পরিবেশন করতেছে।

ইন্টারনেটের সাথে সংযোগ স্থাপন করার ক্ষেত্রে আপনার নিজের ডিভাইসটিও হতে পারে একটি ক্লায়েন্ট বা প্রেরক কম্পিউটার।

যদি আপনার বন্ধু বা নিকটের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চান তাহলে নিজের কম্পিউটারে থাকা ফাইল বা ডিভাইসে থাকা ফাইল প্রেরণ করেন।

আপনার ডিভাইস হয়ে যাবে ফাইল সার্ভার কেননা আপনি আপনার সংরক্ষিত থাকা ফাইল আপনার বন্ধুর বা নিকটতম ব্যক্তির ডিভাইসের পরিবেশন করতেছেন।

যখন আপনি ফোনে ছবি, টেক্সট পাঠান তখন আপনি হন সার্ভার এবং আপনার নিকট টেক্সট বা ছবি পাঠায় তখন হন ক্লাইন্ট।

আর ঠিক এক্ষেত্রে যে যোগাযোগ সৃষ্টি হয়ে থাকে পেয়ার টু পেয়ার যোগাযোগ বা পিটুপি যোগাযোগ বলা হয়।

এই সকল যোগাযোগ একমাত্র তখনই ঘটতে পারে যখন আপনি কোন না কোন ভাবে ইন্টারনেটের সংযুক্ত হয়ে থাকতে পারেন যেমন wi-fi।

যদি ওয়াইফাই বা মোবাইল ডাটা থেকে নিজের ডিভাইসকে সংযুক্ত না করতে পারেন তাহলে বিশ্বের ইন্টারনেট ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন।

ইন্টারনেট কোথা থেকে আসে

অনেকের প্রশ্ন জাগতে পারে আমরা ফোনে ইন্টারনেট প্যাক করে থাকি সেই ইন্টারনেট আসে কোথা থেকে এবং ফোনে একটিভ হয় কিভাবে।

আসলে ইন্টারনেট পেগ বা ইন্টারনেট হল একটি নির্দিষ্ট মাত্রার তরঙ্গ দৈর্ঘ্য যার মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা হয়ে উঠেছে সহজ।

অর্থাৎ মোবাইল নেটওয়ার্ক গুলো প্রতিটি রাষ্ট্র হতে অর্থ বিনিময় করার মাধ্যমে তরঙ্গের বরাদ্দ পায় এবং আমরা সে তরঙ্গ কে কিনে থাকি এই তরঙ্গ দাঁড়ায় ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে থাকে। মোবাইলে থাকা ডাটা বা ইন্টারনেট কখনো ইন্টারনেট নয় বরং এটি হচ্ছে এক ধরনের তরঙ্গ যার মাধ্যমে ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া যায়।

মনে করেন আপনার সিমে এক জিবি ডাটা কিনেছেন, এর মানে আপনি ১ জিবি ডাটা আদান প্রদান এবং গ্রহণ করতে পারবেন।

ইন্টারনেট কি এই বিষয়টি আমাদের লক্ষ চক্ষুর আড়াল হলেও ইন্টারনেটের কিছু অংশ আমাদের লক্ষ চক্ষুর সামনে পড়ে যায় এবং সেই বস্তুটি হলো সাবমেরিন কেবল। একটি মহাদেশ থেকে ওরা আরও একটি মহাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করার ক্ষেত্রে এই কেবলটি ব্যবহার করা হয় ইন্টারনেট সংযোগের জন্য।

সমুদ্রের গভীর দিয়ে এই তার প্রবেশ করিয়ে দুই দেশের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা হয় বলে সাবমেরিন ক্যাবল বলা হয়।

স্যাটেলাইট থেকে পুরো বিশ্বের মাঝে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হলেও তা হয়ে যায় অনেক বেশি ব্যয়বহুল এবং অনেক বেশি ধীরগতি।

সাবমেরিন ক্যাবলে থাকা কেবল দ্বারা অনেকটা আলোর গতির ব্যাগের মতো তথ্য আদান প্রদান করা সম্ভব হয় এবং এটি হয় অনেক সাশ্রয়। এতকিছু জানার পরেও অনেকের হয়তোবা এখনো এ বিষয়টি ক্লিয়ার হয়নি যে ইন্টারনেট কি?

সহজ ভাষায় বলতে গেলে ইন্টারনেট হল একাধিক কম্পিউটারকে জুড়ে একটি নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করা যার মাধ্যমে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়।

ইন্টারনেট কি এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের সম্পূর্ণ পোষ্টটি ছিল আজ এ পর্যন্তই।

আরও পড়ুন: স্যাটেলাইট কি?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top