ইঞ্জিন কাকে বলে? ইঞ্জিনের গঠন, কাজ ও প্রকারভেদ?

ইঞ্জিন কাকে বলে: যে যন্ত্র জ্বালানি দহনের মাধ্যমে তাপশক্তি উৎপন্ন করে এবং উৎপন্ন তাপশক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রুপান্তর করে তাকে ইঞ্জিন বলে।

ইঞ্জিন শুধুমাত্র তাপ শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তর করে না বরং যান্ত্রিক শক্তিকে ও তাপ শক্তিতে রূপান্তর করতে পারে খুব সহজে। আবার ইঞ্জিন যখন কখনো যান্ত্রিক শক্তি উৎপন্ন করে বা রূপান্তর করে তখন সে তার সঙ্গে সংযুক্ত যন্ত্রপাতিকে সক্রিয় করে তোলে।

অর্থাৎ ইঞ্জিন তার সঙ্গে সংযুক্তা প্রত্যেকটি অংশকে কর্মদক্ষতা প্রদান করিয়ে বিভিন্ন কাজ করার উপযোগী করে তোলে। মূলত ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন প্রকার যানবাহন চলাচল করার জন্য এবং মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থার সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য।

ইঞ্জিন কাকে বলে
ইঞ্জিন কাকে বলে?

আমরা ইঞ্জিন সম্পর্কে ধারণা লাভ করলেও এর কিছু প্রকারভেদ ও কাজ রয়েছে সে সম্পর্কে জানিনা এবং সে সম্পর্কে জ্ঞান দেব।

তবে একটি কথা লক্ষ্যণীয় যে ইঞ্জিন কখনো নিজে নিজে কাজ করতে পারে না বরং এর জন্য প্রয়োজন হয় কিছু জ্বালানি।

কেননা ইঞ্জিনিয়ার মধ্যে তাপ শক্তি উৎপাদন করার জন্য জ্বালানীর প্রয়োজন হবে এবং এই পরবর্তীতে এই জ্বালানি থেকে তাপ শক্তি উৎপন্ন হওয়ার মাধ্যমে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হবে।

ইঞ্জিনের প্রকারভেদ

উপরে আমরা ইঞ্জিনের সংজ্ঞা সহ বিশেষ কিছু জ্ঞান প্রদান করেছে এবং যেগুলো অবশ্যই আপনাকে উপকার করবে। তবে বর্তমানে আরো একটি বিষয় আমাদের মাঝে কাজ করে এবং সেটি হচ্ছে এই ইঞ্জিন সম্পর্কে বিশেষ কিছু জ্ঞান প্রদান করা।

ইঞ্জিন সম্পর্কে যদি বিশেষ কিছু জ্ঞান অর্জন করতে চান তাহলে অবশ্যই প্রথমে এর প্রকারভেদ সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে। তাই আমি এর প্রকারভেদ গুলো এখানে উল্লেখ করব যেগুলো সম্পর্কে আপনি জ্ঞান লাভ করলে ইঞ্জিন সম্পর্কে ধারণা পাবেন।

দহনের কিংবা জ্বালানি রূপান্তর এর ওপর ভিত্তি করে ইঞ্জিন কে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যথাঃ

  • অন্তর দহন ইঞ্জিন (Internal combustion engine)।
  • এবং বহির দহন ইঞ্জিন (External combustion engine)।

ইঞ্জিনকে মূলত আমরা এই দুই ভাগে ভাগ করতে পারি এবং সেই সাথে এই দুইটি ইঞ্জিন ভিন্ন রকম কাজ করে।

অর্থাৎ যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তর করে তবে এদের যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তর করার প্রক্রিয়াটি ভিন্ন হয়ে থাকে।

আমরা তো ইঞ্জিনের প্রকারভেদের সম্পর্কে জানলাম তবে এদের কোন জ্ঞান লাভ করলাম না। তাই নিচে আমি এই দুইটি প্রকারভেদের বিশেষ কিছু জ্ঞান প্রদান করার চেষ্টা করব যা আপনার প্রয়োজন হতে পারে।

অন্তর দহন ইঞ্জিন বা Internal combustion engine কাকে বলে? উদাহরণ দাও?

অন্তর দহন ইঞ্জিন: যে ধরনের ইঞ্জিনের দহন প্রক্রিয়া ইঞ্জিন সিলিন্ডারের অভ্যন্তরে অর্থাৎ ভিতরে সংঘটিত হয়ে থাকে তাকে অন্তর দহন ইঞ্জিন বা Internal combustion engine বলে।

উদাহরণ: পেট্রোল ইঞ্জিন, ডিজেল ইঞ্জিন ইত্যাদি।

অর্থাৎ অন্তর দহন ইঞ্জিন হচ্ছে ওই সকল ইঞ্জিন যে সকল ইঞ্জিনিয়ার জ্বালানি অভ্যন্তরে দহন হওয়ার মাধ্যমে তাপ শক্তি উৎপন্ন হয়।

এবং উৎপন্ন তাপ তাপ শক্তিকে পরবর্তীতে জানতে শক্তিতে রূপান্তর করার মাধ্যমে কর্মদক্ষতা প্রদান করা হয় যন্ত্রকে।

ইঞ্জিনের মধ্যে কিছু সিলিন্ডার রয়েছে এবং ইঞ্জিনিয়ার ভেদাভেদ অনুযায়ী বা আকার অনুযায়ী সিলিন্ডারের আকারের প্রবর্তন হয়। তবে ইঞ্জিন যাই হোক না কেন অন্তর দহন ইঞ্জিন বলতে এর দহন প্রক্রিয়া ইঞ্জিনের অভ্যন্তরের সংঘটিত হবে।

সকল কিছু উপর ভিত্তি করে যেহেতু অন্তর দহন ইঞ্জিনিয়ার দহন সিলিন্ডারের ভেতর সংঘটিত হয় তাই এটিকে অন্তর দহন ইঞ্জিন বলে।

বহির দহন ইঞ্জিন বা External combustion engine কাকে বলে? উদাহরণ দাও?

বহির দহন ইঞ্জিন: যে ধরনের ইঞ্জিনের দহন প্রক্রিয়া ইঞ্জিন সিলিন্ডারের বহিরাগত দিকে সংঘটিত হয় শক্তি উৎপন্ন করে তাকে বহির দহন ইঞ্জিন বা External combustion engine বলে।

উদাহরণ: স্টিম ইঞ্জিন ইত্যাদি।

অর্থাৎ যে সকল ইঞ্জিনিয়ার দহন প্রক্রিয়াটি সিলিন্ডারের বাইরে সংঘটিত হয় সেই সকল ইঞ্জিন হচ্ছে বহির দহন ইঞ্জিন।

তবে বহির দহন ইঞ্জিন সর্বক্ষেত্রে আমরা শুধুমাত্র স্টিমারে দেখতে পাই চলাচল করার জন্য এবং সর্বক্ষেত্রে অন্তর দহন ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়।

অর্থাৎ মোট কথায় বলতে গেলে, মূলত নৌপথে চলাচল করার জন্য যে সকল যানবাহন ব্যবহার করা হয় সেগুলোতে বহির দহন ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়। আর বহির দহন ইঞ্জিন ব্যবহার করার পেছনে বিশেষ কিছু কারণ থাকে এবং সুবিধা থাকে।

বহির দহন ইঞ্জিন হচ্ছে নৌ পথে চলাচল করার জন্য ব্যবহৃত যানবাহনের ইঞ্জিন এবং এগুলো বড় ও মাঝারি আকারের হয়ে থাকে।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা ছোট বহির দহন ইঞ্জিন লক্ষ্য করতে পারে তবে এগুলোর শক্তি অনেক বেশি হয়ে থাকে নৌ পথে চলাচল করার ক্ষেত্রে।

ইঞ্জিনের গঠন

আমরা ইতিমধ্যে ইঞ্জিন সম্পর্কে বিশেষ বিশেষ অনেক জ্ঞান অর্জন করেছে তবে এর গঠন সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করিনি।

তবে ইঞ্জিন সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞান লাভ করতে হলে অবশ্যই আমাদেরকে এর গঠন সম্পর্কে জানতে হবে এবং বুঝতে হবে।

ইঞ্জিন এর গঠন বলতে ইহাতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি গুলোকে বোঝানো হয় এবং যেগুলো দ্বারা ইঞ্জিন সক্রিয় হয়। ইঞ্জিনিয়ার গঠনের উপর ভিত্তি করা বিভিন্নভাবে ভাগ করা যেতে পারে এবং তা আমি নিচে উল্লেখ করব।

কাজ করার দিক দিয়ে ইঞ্জিনের দুই ধরনের গঠন বা যন্ত্রাংশ আছে, যথা:

  • ঘূর্ণায়মান গঠন বা যন্ত্রাংশ (Movable parts or structure)
  • অঘূর্ণায়মান  গঠন বা যন্ত্রাংশ (Unmovable parts or structure)

(১). ঘূর্ণায়মান গঠন বা যন্ত্রাংশ (Movable parts or structure)

 ঘূর্ণায়মান গঠন বা যন্ত্রাংশ গুলো হলো:

  • ক্যাম শ্যাফ্ট (Camshaft)।
  • ক্রাংঙ্ক শ্যাফ্ট (Cranks shaft)।
  • পিস্টন (piston)।
  • কানেক্টিং রড (connecting rod)।
  • ফ্লাই হুইল (flywheel)।
  • ভালভ (valve)।

(২). অঘূর্ণায়মান  গঠন বা যন্ত্রাংশ (Unmovable parts or structure)

অঘূর্ণায়মান  গঠন বা যন্ত্রাংশ গুলো হলো:

  • সিলিন্ডার ব্লক (Cylinder block)।
  • সিলিন্ডার হেড (cylinder head)।
  • ক্রাংঙ্ক কেস (crankcase)।
  • ইনটেক মেনিফোল্ট (Intech manifold)।
  • একজস্ট মেনিফোল্ড (Exhaust manifold)।
  • হেড গ্যাসকেট (had gasket)।

আমরা ইঞ্জিন তো দেখেছি তবে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি বা ইঞ্জিনের গঠন সম্পর্কে জানতাম না। তবে আশা করি উল্লেখিত গঠনের বিষয় পরিপূর্ণ জ্ঞান প্রদান করার মাধ্যমে আপনারা ইঞ্জিনিয়ার গঠন সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পেরেছেন।

ইঞ্জিন কাকে বলে এ বিষয়ের উপর পরিপূর্ণ ধারণা লাভ করার জন্য অবশ্যই আপনাকে এর গঠন সম্পর্কে জানতে হবে। আর আপনি যেন পরিপূর্ণ ধারণা অর্জন করতে পারেন সেজন্যই আমি এখানে ইঞ্জিনিয়ার গঠনে ব্যবহৃত প্রত্যেকটি উপাদান সম্পর্কে আলোচনা করেছি।

বর্তমান সময় আমরা যতগুলো প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকি তার প্রত্যেকটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ইঞ্জিন দ্বারা চালিত হয়ে থাকে।

তবে এমন কিছু কিছু যানবাহন রয়েছে যেগুলো ইঞ্জিন দ্বারা চালিত হয় না বরং ইলেকট্রনিক্স এর ডিভাইসের মতো কাজ করে থাকে।

ইঞ্জিনের কাজ হচ্ছে জ্বালানিকে তাপ শক্তিতে রূপান্তর করা এবং উৎপন্ন তাপ শক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তর করে কর্মদক্ষতা অর্জন করা।

আরও পড়ুন: প্রযুক্তি কি?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!