ইজমা কি? ইজমা কাকে বলে? ইজমার উৎপত্তি, হুকুম ও কাজ

ইজমা কি: কোন একটি বিষয় বা কথার উপর সকলে মিলে একসাথে ঐক্যমত করাই হচ্ছে ইজমা। অর্থাৎ ইজমা হচ্ছে মুসলমানদের যেকোনো একটি বিষয়ের উপর একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয় থাকার প্রক্রিয়া।

আবার, শরীয়তের যেকোনো বিষয়ে একই যুগের মুসলিম উম্মতের গুণবান মুজতাহাদিগণদের ঐক্যমত পোষণ করার নামই হচ্ছে ইজমা

যেকোনো প্রকার একটি সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য যখন প্রত্যেকটি মুসলিম একত্রিত হয় সেটি হচ্ছে ইজমা। আর এই ইজমা হচ্ছে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার একটি বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ ইজমা হচ্ছে মুসলমানদের বৈশিষ্ট্য ঐক্য হওয়ার।

ইসলামে ইজমাকে অনেক বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে কেননা ইহার মাধ্যমে মুসলিম ঐক্য সৃষ্টি হয় এবং সমস্যার সমাধান হয়। মুসলমান সর্বদা ঐক্য থাকার জন্য প্রস্তুত থাকবে এটি হচ্ছে সবচেয়ে বড় গুণ এবং এই গুণ ইজমার দ্বারা প্রতিফলিত হয়।

ইজমা কি
ইজমা কি?

ইসলামে ইজমা কে গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং এর উপর কোন বিরোধিতা নেই বরং এটিকে সম্মতি দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ মুসলমান উম্মত বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে একত্রিত হবে এবং সমস্যার সমাধানের উপর একই মত প্রদান করবে এটি স্বাভাবিক।

আর মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যেকোনো সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত নেওয়া জায়েজ করেছে।

আর এইভাবে সমস্যার সমাধান করার মাধ্যমে মুসলমানদের মধ্যে বিশেষ মিল সৃষ্টি হয় এবং অন্যায় দূর হতে পারে।

এই ইজমা হচ্ছে মুসলমানদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য এবং এ বৈশিষ্ট্য সকলের মধ্যে উপস্থিত থাকার মাধ্যমে কেবল ইজমা গঠিত হয়। অর্থাৎ ইজমা গঠন হতে হলে সকলকে একমত হতে হয় এবং ঐক্যবদ্ধ হয় একসঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়।

ইজমা কাকে বলে?

ইজমা কাকে বলে: কোন বিষয় বা কথার উপর সকলে মুসলিম মিলে ঐক্যমত পোষণ করাকে ইজমা বলা হয়।

অন্যদিকে, ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় শরীয়তের যে কোন বিষয়ের উপর একই যুগের মুসলিম উম্মতের পূর্ণবান যেকোন বাণীর উপর ঐক্যমত পোষণ করাকে ইজমা বলে।

ইজমা সম্পর্কে অনেকেরাই ভুল ধারণা থাকতে পারে তাই অবশ্যই আপনাকে সকল বিষয়ের উপর বিবেচনা করে সঠিক ধারণা রাখতে হবে।

ইজমা বলতে সকলকে একত্রিত হওয়াকে বোঝানো হয় এবং একটি বিষয়ের উপর সকলে মিলে অটল থাকা কে বোঝানো হয়।

আর অবশ্যই ইজমা গঠনের জন্য একটি লিডারের প্রয়োজন হবে এবং এই লিডার হবে একজন মুজতাহাদি। অর্থাৎ মুজতাহাদিগণদের বিশেষ কথার উপর ভিত্তি করে সকলে যদি ঐক্যমত্বেষণ করে তাহলে ইজমার গুরুত্ব বৃদ্ধি পাবে এবং সার্থক হবে।

এই ইজমা গঠনের উপর ইসলাম অনেক বেশি অনুপ্রেরণা দিয়েছে কেননা এতে করে মুসলমানদের মধ্যে ভালোবাসার সৃষ্টি হয়।

আর ঐক্য মত থাকার ফলে মুসলমানদের ওপর কোনো প্রকার অন্যায় ও অবিচার বিরাজ করতে পারে না, যা অবশ্যই মঙ্গল।

সুতরাং ইজমা হচ্ছে একটি বিশেষ কাজ যার মাধ্যমে মুসলমান ঐক্য সৃষ্টি হয় এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়।

সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার মাধ্যমে আমরা খুবই সহজে আমাদের পার্থিব জীবনে উন্নতির দিকে ধাবিত করতে পারি।

ইজমার উৎপত্তি

তে কোন সমস্যা সমাধান করা কিংবা নতুন বিধান প্রবর্তন করা কিংবা কোন নতুন ঘটনা সনাক্ত করে তার উপর ভালো মন্দের বিবেচনা করার জন্য ইজমার উৎপত্তি ঘটানো হয়েছিল। আর এটি কোন নতুন ঘটনা নয় কেননা রাসূলুল্লাহ (স.) এর সময় হতে এই পদ্ধতির ব্যবহার ও প্রচলন লক্ষ্য চালু হয়েছিল।

অর্থাৎ ইজমার উৎপত্তির কথা যদি বলা হয় তাহলে বলা যায় যে ইজমার উৎপত্তি হচ্ছে নবী করীম  (স.) এর সময় থেকেই।

এগুলো হলো ইজমা কি ও ইজমার উৎপত্তি এবং আশা করা যায় এই উৎপত্তির উপর ভিত্তি করে আপনারা ইজমা সম্পর্কে ধারণা লাভ করেছেন। ইজমাকে এ বিষয়ে ধারণা অর্জন করা আছে প্রথমে ইজমার উৎপত্তি কোথা থেকে হয়েছে সে সম্পর্কে ধারণা লাভ করা ভালো।

কেননা ইহার মাধ্যমে ইজমা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা অর্জন করা না সম্ভব হলেও এর অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা যায়।

কেননা অনেকেরই ধারণা হতে পারে যে ইজমা আবার কেমন শব্দ এবং এটিকে আসলেই কখনো গঠন করা হয়েছিল মুসলমান ধর্মে।

আর যেহেতু আমাদের প্রিয় নবীর সময় হতে এই প্রথা চালু হয়ে আসছে তাই অবশ্যই এর কোন বাধা নেই। আর এই কথা মনে রাখবেন যে যেহেতু ইজমা গঠনের সময় নবী করিম (স.) কোন বাধা দেয় নাই সুতরাং এটি অবশ্যই ভালো দিক।

নবীজির সময় থেকেই মুসলমান ঐক্য সৃষ্টির মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা হতো এবং এর নাম ইজমা দিত।

আর আমাদের নবীজির সময় থেকে এই প্রথা চালু হওয়ার কারণে এটি অবশ্যই আমরা গঠন করতে পারবো বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে।

ইজমার হুকুম ও কার্যকারিতা

আমরা সকলে হয়তোবা ইজমা সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান অর্জন করেছি তবে এই ইজমার কিছু হুকুম ও কার্যকারিতা রয়েছে।

এবং এই হুকুম ও কার্যকারিতা সম্পর্কে আমাদের সকলকে কিছু না কিছু ধারণা রাখা প্রয়োজন মুসলিম ঐক্য তৈরি করার ক্ষেত্রে।

ইজমার হুকুম সমূহ হলো:

  • ইজমার ভিত্তিতে যেসকল বিধান প্রণীত হয় তার উপর আমল করা ওয়াজিব।
  • বিধি-বিধান নির্ধারণে ইজমা অকাট্য দলিল হিসেবে সাব্যস্ত।
  • ইজমা হচ্ছে শরীয়তের তৃতীয় উৎস, অর্থাৎ এটি শরীয়তের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

কার্যকারিতা:

  • যেকোনো সময় জটিল সমস্যার সম্মুখীন হলে ইজমার মাধ্যমে তার সমাধান করা যায়।
  • নতুন বিজিবি গান প্রবর্তন করার ক্ষেত্রে ইজমা কাজ করে।
  • ইজমার দ্বারা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে দাঙ্গা ফ্যাসাদ দূর হয়।
  • ইজমার মাধ্যমে নির্দিষ্ট একটি দলের মধ্যে পরামর্শ এর কার্যকারিতা গৃহীত হয়।
  • ইজমার মাধ্যমে সকলের রাজিতে পরিপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
  • ইজমার মাধ্যমে বৈধতা, দৃষ্টান্ত এবং আদর্শ এর প্রতিফলন ঘটে।
  • যেকোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার পর তা দ্রুত সমাধান করা যায়।
  • যে কোন ধরনের বিচার করার ক্ষেত্রে সুষ্ঠু সমাধান নিহিত হয়।

এগুলো হলো ইজমার কিছু হুকুম ও কার্যকারিতা এবং এগুলোর উপর ভিত্তি করে ইজমা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হওয়ার সমাজে। আর এই পোস্টে আমরা ইজমা কি ও ইজমা কাকে বলে এই বিষয়ের উপর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে সাজানোর চেষ্টা করেছি।

ইজমা হচ্ছে ইসলামের একটি বিশেষ দিক যে দিক অবলম্বন করার মাধ্যমে মুসলমানকে সৃষ্টি হয় এবং সমস্যা সমাধান হয়।

মূলত ইজমার রয়েছে দুটি মূল উদ্দেশ্য এবং এই উদ্দেশ্য দুটি হলো মুসলমান ঐক্য সৃষ্টি করা এবং সমস্যার সমাধান বের করা।

তবে সর্বদা মুসলিম ঐক্য তৈরি করার মাধ্যমে যেহেতু আমাদের মধ্যে কোন প্রকার ঝগড়া-বিবাদ থাকে না তাই অবশ্যই এটি একটি ভালো দিন। ইহার মাধ্যমে সমাজের শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ঐক্য সৃষ্টির মাধ্যমে মুসলমানদের উপর কোন অত্যাচার হতে পারে না।

আরও পড়ুন: সুন্নাহ শব্দের অর্থ কি?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!