আস্তাগফিরুল্লাহ অর্থ কি? আস্তাগফিরুল্লাহ বলার পাঁচটি উপকারিতা

আস্তাগফিরুল্লাহ অর্থ কি: আস্তাগফিরুল্লাহ অর্থ আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি, এটি হচ্ছে শ্রেষ্ঠ ইস্তেগফারের অন্তর্ভুক্ত।

কয়েক প্রকার ইস্তেগফার আছে যেগুলো আল্লাহ তা’আলা অনেক বেশি পছন্দ করেন এবং বান্দার সকল প্রকার গুনাহ মাফ করে দেন।

আল্লাহর নিকট নিজের সকল করা পাপের ক্ষমা পাওয়ার জন্য আমরা আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করে থাকি এবং ইহার দ্বারা আল্লাহর নিকট নিজের গুনাহ মাফ চেয়ে থাকে। প্রায় আমরা আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করি এবং এটি মুসলমানদের মুখের একটি অভ্যাস হয়ে উঠেছে।

প্রতি ফরজ নামাজের পর আমরা মুসলমান আছি অনেকেই যারা তিনবার আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করে এবং পরবর্তীতে অন্যান্য আমল করে।

এর ফজিলত অনেক বেশি এবং স্বয়ং আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এই আমলটি করতে ছিলেন।

আস্তাগফিরুল্লাহ এর গুরুত্ব ফজিলত এবং তাৎপর্য এত বেশি তা বলে বোঝানোর বাইরে, কেননা ইহার দ্বারা আমাদের গুনাহ মাফ হয়ে যায়।

গুনাহ মাফ হওয়ার মূল মানে ও উদ্দেশ্য হলো জান্নাত আমাদের অতি সন্নিকটে এবং জাহান্নাম অতি দূরে অবস্থান করতেছে।

আস্তাগফিরুল্লাহ বলতে আমরা আল্লাহর নিকট নিজের গুনাহের জন্য মাফ চাওয়া বুঝে থাকি, তবে প্রকৃতপক্ষে ইহার দ্বারা নিজের কৃত গুনাহ হওয়ার জন্য লজ্জিত হওয়াকে বুঝানো হয়। আর আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নিকট হতে রহমত লাভ করতে পারে এবং নিজের গুনাহ মাফ করতে পারে।

তবে অবশ্যই আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করার সময় নিজেকে নিজের গুনাহর দিকে তাকিয়ে লজ্জিত হতে হবে এবং এমন কোন কাজ আর করা চিন্তাভাবনা মাথায় আনা যাবে না। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করা প্রয়োজন কেননা আমরা প্রায় জানতে এবং অজান্তে প্রতিটি সময় গুনাহের কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ি।

যেমন রাস্তা দিয়ে বের হলাম মেয়েকে দেখতে পেলাম, তারপর দীর্ঘ সময় ধরে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম এটিও একটি গুনাহের কাজ।

সুতরাং আমাদের প্রতিটি মুহূর্তে গুনাহ অপেক্ষা করতেছে এবং শয়তান ধোঁকা দিচ্ছে তাই আমাদেরকে আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করা উচিত।

আমরা যখন আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করব শয়তান আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যাবে এবং পাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারব।

আস্তাগফিরুল্লাহ বলার পাঁচটি উপকারিতা

আস্তাগফিরুল্লাহ অর্থ কি জানার পর এখন আস্তাগফিরুল্লাহ বলার পাঁচটি উপকারিতা সম্পর্কে নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • যে সব সময় ইস্তেগফার অর্থাৎ আস্তাগফিরুল্লাহ সঙ্গে লেগে থাকে আল্লাহ তায়ালা সকল প্রকার বিপদ-আপদ থেকে ওই বান্দাকে উদ্ধার করে।
  • যে সব সময় ইস্তেগফার অর্থাৎ আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করবে আল্লাহ তা’আলা ওই বান্দার সকল দুশ্চিন্তা দূর করে দিবেন।
  • যে সবসময় আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করে আল্লাহ বান্দার জন্য এমন জায়গা হতে রিজিকের ব্যবস্থা করে দিবেন যা সে কল্পনাও পারে না।
  • যে সবসময় আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করে আল্লাহর কোন আজাব গজব এবং শাস্তি ভুপৃষ্টে পতিত হলে ওই বান্দার আচর লাগাতে পারবে না।
  • যা সবসময় আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করবে আল্লাহ তা’আলা ওই বান্দার দোয়া করা মাত্র কবুল করে নিবেন এবং মনের আশা পূরণ করে নেবেন অর্থাৎ মুস্তাযাবুত দাওয়া বানিয়ে দিবেন।

এগুলো হলো আস্তাগফিরুল্লাহ বলার পাঁচটি উপকারিতা এবং অবশ্যই আপনি যদি আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করবেন বা করেন তাহলে আল্লাহ তা’আলা আপনার জীবনের সমস্ত গুনাহগুলো মাফ করার সাথে সাথে এই কয়েকটি উপকারিতা প্রদান করবেন।

আল্লাহ তায়ালা যা করেন মঙ্গলের জন্য এবং আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করার মাধ্যমে মঙ্গল বেশি বৃদ্ধি পায় এবং কল্যাণকর হয় তার জীবন।

জীবনে কল্যাণ অর্জন করতে চায় না এমন বান্দা খুঁজে পাওয়া মুশকিল এবং এক্ষেত্রে আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করা অত্যাবশ্যক।

পথে চলার ক্ষেত্রে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করা অনেক বেশি ফজিলত, ইহার মাধ্যমে বান্দার বিপদ রাস্তায় থাকা কেটে যায়। কোন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে যায় তাহলে আল্লাহ তা’আলা ওই বান্দার হেফাজত করে যদি সে আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করতে থাকে।

যদি কেউ ভয় পায় তাহলে আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করা উচিত কেননা ইহার মাধ্যমে সে আল্লাহ তায়ালার সুরক্ষা পেয়ে যায়।

সুরক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহর নিকট আরো দোয়া রয়েছে এবং সেই দোয়াটি হচ্ছে “ফি আমানিল্লাহ” আল্লাহ তা’আলা বান্দার হেফাজত করে।

আপনারা আস্তাগফিরুল্লাহ শব্দের পরিপূর্ণ অর্থ জানার পর অবশ্যই আমল করতে অনেক বেশি উৎসাহিত হবেন এবং নিজেকে বদলে নেওয়ার চেষ্টা করবেন।

আস্তাগফিরুল্লাহ কখন পড়তে হয়

এই আস্তাগফিরুল্লাহ তিলয়াত করার কোন সুনির্দিষ্ট সময় থাকে না বরং আপনি আপনার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করতে পারেন।

আস্তাগফিরুল্লাহ আপনি আপনার বিপদে আপদে সুখে-দুখে সর্বক্ষেত্রে পাঠ করতে পারেন।

আস্তাগফিরুল্লাহ কখন পড়তে হয়
আস্তাগফিরুল্লাহ কখন পড়তে হয়?

যদি সুখে-দুখে আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করেন তাহলে আল্লাহ তায়ালা সুখ বৃদ্ধি করে দিবেন এবং দুঃখ হয়ে থাকলে দুঃখ দূর করে দিবেন।

আবার আপনি যদি আপনার গুনাহ নিয়ে অনেক বেশি দুশ্চিন্তায় থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে আস্তাগফিরুল্লাহ বা ইস্তেগফার পাঠ করতে হবে।

ইস্তেগফারের মতে সবচেয়ে সহজ ইস্তেগফার গুলোর মধ্যে আস্তাগফিরুল্লাহ ইস্তেগফারটি হচ্ছে অন্যতম, এই ইস্তেগফারের ফজিলত নিয়ে অসংখ্য হাদিস বর্ণিত হয়েছে।

তাহলে ইস্তেগফারের ফজিলত বুঝার মাধ্যমে আপনি অবশ্যই বুঝতে পারবেন যে ইসলামের ইস্তেগফারের যোগ্যতা কতটুকু।

আস্তাগফিরুল্লাহ তেলাওয়াত করার কোন সুনির্দিষ্ট সময় নেই এবং সুনির্দিষ্ট কোন আমল নেই। আপনি যতক্ষণ ইচ্ছা ততক্ষণ আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করতে পারেন এবং এটিকে আপনার জিকির হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন।

জিকির বান্দার মুখের জরতা দূর করে এবং আল্লাহ ওই বান্দাকে বেশি পছন্দ করে যে জিকির করে মুখের জরতা দূর করেছে।

আর আল্লাহ তাআলার নিকট একবার পছন্দনীয় হয়ে উঠতে পারলে আপনার আমার কাছে জান্নাত লাভ করা তেমন কোনো বিষয় হবে না।

তাই জিকির হিসেবে আস্তাগফিরুল্লাহ বেশি বেশি করে তেলাওয়াত করবেন কেননা ইহার মাধ্যমে আপনি বিপদ থেকে তো রক্ষা পাবেনই সেই সাথে রিযিক এবং গুনাহ মাফের বিষয়ে সাহায্য পাবেন। এমন অনেক গুনাহ থাকবে যা আল্লাহ তাআলা আপনাকে গোপনে ক্ষমা করে দিবেন এবং আপনি নিজেও সে সম্পর্কে কোন অবগত থাকবেন না।

সুতরাং বেশি বেশি করে আস্তাগফিরুল্লাহ তেলাওয়াত করতে হবে কেননা ইহার মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা সন্তুষ্টি অর্জন করার সাথে সাথে জীবনে আসার প্রত্যেকটি বাধা সম্পর্কে মোকাবেলা করা যায়। আল্লাহ তা’আলা জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আপনাকে আমাকে হেফাজত করবে যদি আপনি আমি প্রতিনিয়তই আস্তাগফিরুল্লাহ আমলটি তেলাওয়াত করতে পারি।

তাই আমি বলব আপনি যখনই সুযোগ পাবেন তখনই আস্তাগফিরুল্লাহ তেলাওয়াত করবেন সেটা হোক আপনার সুখের সময় কিংবা দুঃখের সময়।

শেষ কথা:

আস্তাগফিরুল্লাহ অর্থ কি এ বিষয়টি নিয়ে আশা করে আপনারা সম্পূর্ণ ধারণা অর্জন করতে পেরেছেন এবং আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করার ফলে কি কি ধরনের উপকারিতা উপভোগ করা যায় সে সম্পর্কে ধারণা অর্জন করতে পেরেছেন।

আসলে ইবাদত করা অনেক বেশি জরুরি হয়ে থাকে তবে ইবাদত করার পূর্বে আমাদেরকে আমাদের গুনাহ মাফ করে নিতে হয়।

গুনাহ মাফ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি উত্তম এবং সহজ পন্থা হলো সব সময় আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করা।

প্রত্যেকটি মুসলমানের মুখে যেকোনো সময় আস্তাগফিরুল্লাহ শব্দ বেরিয়ে যায় এবং শব্দটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমাদের জীবনের জন্য যার কোন শেষ নেই।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তিনার সকল আজব গজব থেকে রক্ষা প্রদান করবেন এবং আমাদের জীবনকে হেফাজত করবেন সেই সাথে এমন জায়গা হতে রিজিকের ব্যবস্থা করবেন যা আমরা কল্পনা করতে পারি না।

আরও পড়ুন: সুবহানাল্লাহ অর্থ কি?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!