আসমানী কিতাব কাকে বলে: ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় যেসব কিতাব আল্লাহ তা’আলা মানবজাতির হিদায়াতের জন্য পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনা স্বরূপ নাযিল করেছেন তাকে আসমানী কিতাব বলে। এক কথায়, আল্লাহ তায়ালার হেদায়েতি বাণীর সম্মলিত গ্রন্থবলীকে আসমানী কিতাব বলা হয়।
সুতরাং বলা যায় যে আসমানী কিতাব হল আল্লাহ তায়ালার বাণী সমষ্ঠি, যেখানে আল্লাহ তায়ালার হেদায়েতি বাণীগুলো বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা জিবরাইল (আঃ) এর মাধ্যমে তার বাণী রসূলগণের নিকট প্রেরণ করতেন এবং অতঃপর নবীগণ তা মানুষের নিকট পৌঁছে দিতেন।
মানবজাতির জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে যত প্রকার দিকনির্দেশনা প্রয়োজন হয় তার প্রত্যেকটি আসমানী কিতাবে বিদ্যমান থাকে। আসমানী কিতাব হচ্ছে আল্লাহ তায়ালা হতে প্রেরণকৃত বাণীর সমষ্টি, যার প্রত্যেকটি বাণী দ্বারা মানবজাতির হেদায়েত নিশ্চিত হয়।

বিভিন্ন কারণে মানুষ পথভ্রষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং ইসলাম ধর্ম থেকে নিজেকে অপসারণ করে অন্য ধর্মে যেতে পারে।
তবে মানবজাতি যেন জীবনে কোন ভুল না করে এবং সঠিক পথে চলে তা নিশ্চিত করতে আসমানী কিতাব অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
আসমানী কিতাব যেহেতু স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা হতে প্রেরণ করা হয়েছে, সুতরাং বলা যায় যে এটি মানবজাতির জন্য অনেক বেশি হেদায়েত পূর্ণ। মানুষ তার জীবনের পরিপূর্ণ দিক নির্দেশনা যদি অর্জন করতে চায় তাহলে অবশ্যই তাকে আসমানী কিতাবের প্রতি নজর রাখতে হবে।
আসমানে কিতাবের বিষয়বস্তু
আল্লাহ তাআলা আসমানী কিতাব সমূহের মধ্যে নানা ধরনের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা উপস্থাপন করেছেন হেদায়েতের জন্য।
আর মানবজাতির হেদায়েতের জন্য আল্লাহ তা’আলা যে সকল বিষয়বস্তু আসমানী কিতাবে উল্লেখ করেছেন তা বুঝতে হবে।
আমরা যখন আসমানী কিতাবের এই সকল বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে পারব তখন আসমানী কিতাবের ধারণা পাবো। আর আসমানের কিতাবের ধারণা পাওয়ার মাধ্যমে আমরা সম্পূর্ণরূপে হেদায়েত প্রাপ্ত হবে এবং আসমানী কিতাব অনুযায়ী আল্লাহর দ্বীন মানতে পারব।
আসমানী কিতাবের কতিপয় বিষয়বস্তু নিচে উল্লেখ করা হলো:
- আল্লাহ তা’আলা সত্তাগত পরিচয় হচ্ছে আসমানি কিতাবের বিষয়বস্তু।
- আল্লাহ তায়ালার গুণাবলীর বর্ণনা হচ্ছে আসমানী কিতাবের বিষয়বস্তু।
- নবী রাসূলগণের বর্ণনা হচ্ছে আসমানি কিতাবের বিষয়বস্তু।
- পূর্ববর্তী জাতি সমূহের বিবরণ নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে আসমানী কিতাবের বিষয়বস্তু।
- অবাধ্য ও কাফিরদের পরিণতির বিবরণ হচ্ছে আসমানী কিতাবের বিষয়বস্তু।
- হালাল এবং হারাম এর বর্ণনা সম্মলিত জ্ঞান হচ্ছে আসমানী কিতাবের বিষয়বস্তু।
- বিধি-বিধান সংক্রান্ত বিবরণ হচ্ছে আসমানী কিতাবের বিষয়বস্তু।
- শাস্তি ও সতর্ককরণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে আসমানী কিতাবের বিষয়বস্তু।
- উপদেশ ও সুসংবাদ সম্পর্কে বিবরণ হচ্ছে আসমানী কিতাবের বিষয়বস্তু।
- আকিদা সংক্রান্ত বিষয় সমূহের বিবরণ উল্লেখ করা হচ্ছে আসমানী কিতাবের বিষয়বস্তু।
- পরকাল সংক্রান্ত বিষয় সম্পর্কে বিবরণ প্রদান করা হচ্ছে আসমানী কিতাবের বিষয়বস্তু ইত্যাদি।
এগুলো হলো আসমানী কিতাবের বিষয়বস্তু, যেগুলো দ্বারা আসমানী কিতাব সম্পূর্ণরূপে মানবজাতির হেদায়েত হিসেবে তৈরি হয়েছে।
আবার সেই সাথে আসমানি কিতাবের বিষয়বস্তু দ্বারা হেদায়েত বাণী কিভাবে পৌঁছে দেওয়া যেতে পারে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
আসমানী কিতাব হচ্ছে এমন একটি কিতাব যে কিতাবে সকল বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং হেদায়েত দেওয়া হয়েছে। আপনি যদি সাফল্য অর্জন করতে চান এবং হেদায়েত পেতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে আসমানী কিতাব পড়তে হবে এবং অন্যকে অনুপ্রেরণা দিতে হবে।
আসমানে কিতাবে কয় প্রকার ও কি কি
মানবজাতির হেদায়েতের জন্য শেষ নবী পর্যন্ত অনেকগুলো আসমানী কিতাব আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে ফেরেশতা দিয়ে নাযিল হয়েছে। আর এই সকল কিতাবগুলোর মধ্যে আবার রয়েছে কিছু প্রকারভেদ যেগুলো বড় এবং ছোট কিতাব দেখা হয়েছে।
যেহেতু আসমানী কিতাব সম্পর্কে জানতে এসেছে সেহেতু অবশ্যই আমাদেরকে এর প্রকারভেদ জানতে হবে আসমানী কিতাবের।
আসমানী কিতাবের প্রকারভেদ গুলো জানার মাধ্যমে আমরা খুবই সহজে সে সকল আসমানী কিতাবের পার্থক্য বুঝতে পারব।
১০৪টি আসমানী কিতাব রয়েছে যার মধ্যে ১০০টি ছোট এবং চারটি প্রসিদ্ধ কিতাব চারজন প্রসিদ্ধ রাসুলের উপর নাযিল হয়েছিল, যেমন:
- হযরত মুসা (আ.) – তাওরাত নাযিল হয়।
- হযরত দাউদ (আ.) – যাবুর নাযিল হয়।
- হযরত ঈসা (আ.) – ইঞ্জিল নাযিল হয়।
- বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স.) – কোরআন মাজিদ নাযিল হয়।
রাসূলদের ওপর মানবজাতির হেদায়েতের জন্য আল্লাহ তা’আলা সর্বমোট ১০৪ খানা আসমানি কিতাব নাযিল করেছেন। এই ১০৪ খানা কিতাবের মধ্যে প্রসিদ্ধ বা বড় কিতাব হচ্ছে ৪ খানা ও বাকি ১০০ খানা কিতাব হচ্ছে ছোট কিতাব/সহিফা।
এগুলো ছিল আসমানে কিতাবের কিছু প্রকারভেদ এবং প্রকারভেদ বলে ভুল হবে এগুলো ছিল আসমানী কিতাবের তথ্য।
যে তথ্যগুলো দ্বারা আমরা বুঝতে পারে যে আসমানী কিতাব কতটি নাযিল হয়েছে মানবজাতির হেদায়েতের জন্য এবং এগুলো বড় না ছোট।
প্রসিদ্ধ আসমানী কিতাব
আসমানী কিতাব হচ্ছে মোট ১০৪ খানা এবং এই ১০৪ খানার মধ্যে চারখানা কিতাব হচ্ছে সবচেয়ে বড় কিতাব। এই চারখানা কিতাবকে প্রসিদ্ধ আসমানী কিতাব বলা হয় কেননা এগুলো চারজন প্রসিদ্ধ নবীর উপর নাযিল হয়েছিল। প্রসিদ্ধ চারটি আসমানে কিতাব হলো:
- হযরত মুসা (আ.) – তাওরাত নাযিল হয়।
- হযরত দাউদ (আ.) – যাবুর নাযিল হয়।
- হযরত ঈসা (আ.) – ইঞ্জিল নাযিল হয়।
- বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স.) – কোরআন মাজিদ নাযিল হয়।
আসমানী কিতাব সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞান লাভের জন্য, আপনি আমাদের পুরো পোস্ট পড়েছেন এর জন্য ধন্যবাদ। আসমানী কিতাব বলতে আল্লাহ তাআলার বাণী সমষ্ঠিকে বোঝানো হয় যার দ্বারা মানুষ হেদায়েত লাভ করতে পারে জীবন পরিচালনার জন্য।
এই আসমানী কিতাবে যতগুলো বাণী উল্লেখ করা হয়েছে তার প্রত্যেকটি মানবজাতির হেদায়েতের জন্য ও দিক নির্দেশনা স্বরূপ। আপনি যদি হেদায়েত পেতে চান এবং জীবন পরিচালনার জন্য সঠিক দিকনির্দেশনা পেতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে আসমানী কিতাবে পড়তে হবে।
আরও পড়ুন: ঈমান কাকে বলে?