আল্লাহর সর্বপ্রথম কি সৃষ্টি করেছেন: মহান আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করেছেন আবার কোথাও আছে আরশ কোথাও আছে নবীর নূর সর্বপ্রথম সৃষ্টি। অনেক প্রখ্যাত এবং বিখ্যাত আলেম রয়েছেন যারা সর্বপ্রথম সৃষ্টি হিসেবে কলমকেই বলেছেন বলেছেন যে কলম হচ্ছে মহান আল্লাহর সর্বপ্রথম সৃষ্টি।
অনেক হাদিসে রয়েছে যে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর নূর হচ্ছে সর্বপ্রথম সৃষ্টি। আবার অনেক হাদিসে রয়েছে বা অনেক আলেম বলেন যে মহান আল্লাহ সর্বপ্রথম সৃষ্টি হচ্ছে আরশ।
এখন আমরা এগুলো সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করে জানব এবং বুঝার চেষ্টা করব যে মহান আল্লাহ তাআলার সর্বপ্রথম সৃষ্টি কি? সর্বপ্রথম আমরা মহান আল্লাহতালার প্রথম সৃষ্টি কলম নিয়ে আলোচনা করব এবং কলাম কেন তা সম্পর্কে ভালোভাবে জ্ঞান অর্জন করব।

প্রখ্যাত আলেম ইবনে জারীর , ইবনুল আরাবী বলেছেন যে মহান আল্লাহর সর্বপ্রথম সৃষ্টি হচ্ছে কলম।
আর এরপরে প্রখ্যাত আলেম ইমাম আলবানী তাদের মতামতের সাথে সহমত পোষণ সন করেছেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম যে জিনিস সৃষ্টি করেছেন তা হচ্ছে কলম। এরপর কলম কে আদেশ করা হয় কিয়ামত পর্যন্ত যা হবে তার সব কিছুই লিখতে। (আবু ইয়ালা ১/১২৬ আল আসমা ওয়াজ সিফাত লিল বায়হাকি ২৭১)
আল্লাহর সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করে তাকে বললেন লিখো কলম জিজ্ঞাসা করলেন কি লিখব? তখন মহান আল্লাহ তা’আলা বললেন কিয়ামত পর্যন্ত আগমনকারী প্রতিটি বস্তুর তাকদীর লিখো (আবু দাউদ, তিরমিজি, বায়হাকী)
আবার মালেকী মাজহাবের বিখ্যাত আলেম ইবনুল আরাবী বলেছেন যে,
কলমের পূর্বে মহান আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা ছাড়া আর কিছুই ছিল না ( হাদিস আরেযাতুল আহওয়াযী)
হযরত উবাদা ইবনে ছামিদ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে,
নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করেছেন এরপর কলম কে বলেছেন লিখো।
কলম বলল হে প্রভু কি লিখব মহান আল্লাহ বলেন ইতিপূর্বে যা হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত যা হবে।
(৫৭৮ হাদিস মুসনাদে আবু দাউদ তায়লাসী, ২১৫৫ হাদিস তিরমিজি)। এতক্ষণ পর্যন্ত আমরা জানলাম মহান আল্লাহ সর্বপ্রথম কি সৃষ্টি করেছেন এবং এর উত্তর হচ্ছে কলম।
মহান আল্লাহ তায়ালার সর্বপ্রথম সৃষ্টি আরশ সম্পর্কে বর্ণনা
আবার একদল আলেমের মত বা তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিনের সর্বপ্রথম সৃষ্টি হচ্ছে আরশ।
বিখ্যাত আলেম আল্লামা ইবনে তাইমীয়া এটি বলেছেন এবং তিনার সাথে আরও অন্যান্য আলেম সহমত পোষণ করেছেন।
তাদের দেওয়া দলিল নিচে দেওয়া হল যেগুলোর মাধ্যমে আপনি এ বিষয়টি সম্পর্কে বুঝতে পারবেন।
ইমরান বিন হুসাইন থেকে বর্ণিত হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
আদিতে একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই ছিলেন তিনি ছাড়া আর কিছুই ছিল না তার আরশ ছিল পানির উপরে।
তারপর তিনি প্রত্যেকটি জিনিস লাওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ করেন এবং আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেন।
আবার এই হাদিসের মত গ্রহণ করে অনেক আলেম বলে থাকেন যে মহান আল্লাহ সর্বপ্রথম পানি সৃষ্টি করেছেন। তিনারা বলে থাকেন যে যেহেতু পানির উপরে আরশ ছিল তাই প্রথম সৃষ্টি হচ্ছে পানি এই লাইনটি সম্পর্কে আমি জানিনা।
আবার হাফিজ আবুল আলা হামদানী এর বর্ণিত তথ্য মোতাবেক যমহুর আলেমগণের অভিমত হলো আরশ সর্বপ্রথম সৃষ্টি।
মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে অমর ইবনে আস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন,
আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে বলতে শুনেছি ” আকাশ মন্ডলী এবং পৃথিবীর সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর আগেই মহান আল্লাহর সৃষ্টি জগতের তকদির লিপিবদ্ধ করে রাখেন তখন তার আরশ ছিল পানির উপর।
আর এ অনুযায়ী আলেমগণ বলেন যে, আল্লাহ কলম দ্বারা মাকাদীর লিপিবদ্ধ করা হলো এই তকদির।
আর এটি দ্বারা এ কথা বুঝা যায় যে, আল্লাহ যে কলম দ্বারা মাকাদীর লিপিবদ্ধ করেছেন আরশ তার আগে সৃষ্টি করা হয়েছে। এটি হচ্ছে জমহুর এর অভিমত।
আরেকটি হাদিসে পাওয়া যায় যে, ইমাম ইবনে হুসায়ন (রা:) বলেন
ইয়ামেনের কতিপয় লোক রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলল যে দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন এবং সৃষ্টি জগতের সূচনা সম্পর্কে জানতে তারা এখানে এসেছে।
আমাদের প্রিয় নবী বললেন, মহান আল্লাহ তায়ালা ছিলেন তার আগে কিছুই ছিল না এবং তার আরশ ছিল পানির উপর।
স্মারকলিপিতে তিনি সবকিছু লিপিবদ্ধ করেছেন এবং পরে পৃথিবী ও আকাশ মন্ডলের সৃষ্টি করেছেন।
এই হাদিসটির এক বর্ণনায় আছে তার আগে এবং আরেক বর্ণনায় আছে তার সাথে।
আল্লাহর সর্বপ্রথম সৃষ্টিই প্রিয় নবীর নূর সম্পর্কে বর্ণনা
এতক্ষণ পর্যন্ত আমরা জানলাম বা বুঝার চেষ্টা করলাম যে মহান আল্লাহর সর্বপ্রথম কি সৃষ্টি করেছেন। এখন আমরা মহান আল্লাহ তাআলার এই সর্বপ্রথম সৃষ্টি বিষয়ে আরো কিছু জানবো এবং এই বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝা এবং জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করব।
আবার কিছু বর্ণনা এবং অনেক আলেমগণ মনে করে থাকেন যে আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম আমাদের প্রিয় নবীর নূর সৃষ্টি করেছেন।
এই সম্পর্কে একটি হাদিস রয়েছে যা আমি আপনার বুঝানোর জন্য নিচে প্রদান করলাম।
এই হাদিসটি হযরত জাবের (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেন যে, আমি হুজুর সা: উনাকেকে বললাম। ইয়া রাসুলুল্লাহ সা: আমার পিতা মাতা আপনার জন্য কুরবানী হোক আপনি আমাকে জানিয়ে দিন যে আল্লাহর সর্বপ্রথম কোন জিনিস সৃষ্টি করেছেন।
প্রিয় নবী বললেন হে জাবের রা: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ সর্বপ্রথম সবকিছুর পূর্বে আপনার নবীর নূর মোবারক সৃষ্টি করেছেন।
এরপর সেই নূর মোবারক মহান আল্লাহর তিনার ইচ্ছা অনুযায়ী কুদরতের মাঝে ঘুরিয়েছেন বা ঘুরিয়েছিল।
আরে সেসময় লাওহো, জান্নাত, কলাম, জাহান্নাম, আসমান, ফেরেশতা, জমিন, সূর্য, চন্দ্র, জিন এবং মানুষ কিছুই ছিল না।
(যুরকানি ১/৪৬) (সীরাতে আলবীয়া ১/৩০) (দাইলামি শরীফ ২/১৯১) (নূরে মোহম্মদী ৪৭ পৃষ্ঠা), (মাদারেজুন নবুওয়াত ২/২)
আর এই হাদিসটি সম্পর্কে অনেক আলেমের মতভেদ রয়েছে এবং অনেকে এটি বিশ্বাস করেন না। অনেক আলেম এই হাদিসকে জাল হাদিস বলে এবং এটি জাল তথ্য বলে আখ্য দেন তারা বলেন প্রিয় নবী মাটির তৈরি নূরের নয়।
আমাদের প্রিয় নবীর মহব্বতে অথবা আমাদের প্রিয় নবীর মর্যাদা বর্ণনা করতে গিয়ে অনেকেই বলেন বা বলে থাকেন।
এই হাদিসটির সম্পর্কে মুহাদ্দিসগণ বা বড় বড় আলেমগণ বলেছেন এই হাদিসটি জাল অর্থাৎ জাল বলে অভিহিত করেছেন।
শেষ কথা:
আশা করি আমাদের এই পোস্টটি আপনি সম্পূর্ণভাবে পড়েছেন এবং পরে বুঝতে পেরেছেন যে মহান আল্লাহ সর্বপ্রথম কি সৃষ্টি করেছেন? আর যদি আপনার অন্য কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে আপনি আমাদের তা জানান আমরা তা বলার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
ভাই পরিশেষে একটি কথা মহান আল্লাহর সর্বপ্রথম সৃষ্টি এ নিয়ে আপনার মাথাব্যথা হওয়ার তো কোন কারণ নেই।
এটি জানার মাধ্যমে তো আপনার ঈমানের কোন পরিবর্তন আসতে পারে না বা আসবে না বলে আমি মনে করি।
মহান আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম সৃষ্টি নিয়ে বিভিন্ন রেওয়াতে বিভিন্ন হাদিস বর্ণিত রয়েছে আর সব হাদিস যুক্তিসঙ্গত। তাই আপনি আপনার কৌতূহলের বসে এই সকল জানার মাধ্যমে আপনার ঈমানকে দুর্বল করবেন না আপনি আপনার ঈমানকে খাঁটি করুন।
আপনার ঈমান কিভাবে খাঁটি হবে আপনার আমল কিভাবে ভাল হবে আপনি সেদিকে লক্ষ্য করুন।
আপনার যেহেতু মনের ভিতরে কৌতুহল এই বিষয়টি নিয়ে জ্ঞান অর্জন করার তাই আমি এখানে এটি প্রদান করেছি।
আর আমি আশা করতেছি যে আপনি আপনার প্রশ্নের সঠিক উত্তর পেয়েছেন এবং আপনার প্রশ্নের সমাধান পেয়েছেন? প্রথমে আপনি নিজে ভাল হন এবং অন্যকে ভালোর পথ প্রদর্শন করুন সব সময় ভালোর দিকে যান।
আর এরকম যদি অন্য কোন বিষয় আপনার আরো অন্য কৌতুহল জেগে থাকে তাহলে আমাদের জানান।
নিশ্চয়ই আমরা সেই বিষয় সম্পর্কে আপনাকে জানানোর চেষ্টা করব এবং বুঝানোর চেষ্টা করব।
আরো পড়ুন: নিশ্চয়ই আল্লাহ উত্তম পরিকল্পনাকারী।