আলহামদুলিল্লাহ অর্থ কি? আলহামদুলিল্লাহ বলার ফজিলত

আলহামদুলিল্লাহ অর্থ কি: আলহামদুলিল্লাহ অর্থ হচ্ছে সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ তাআলার জন্য। আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায়ের জন্য আমরা “আলহামদুলিল্লাহ” ফজিলতময় এই আয়াতের পাঠ করে থাকি। যেকোনো ধরনের সুখবর বা ভালো অবস্থা সম্পর্কিত সংবাদের বিপরীতে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এটি বলা হয়ে থাকে।

যেমন: ভাই আপনি কেমন আছেন? প্রশ্নের জবাবে আমরা আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি বলা হয়।

অর্থাৎ ইহা দ্বারা বোঝানো হয়েছে আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমত মেহেরবানীতে আমরা ভালো আছি।

আলহামদুলিল্লাহ ঐ সকল ক্ষেত্র ব্যবহার করা হয় যখন আমরা কোন ধরনের সুসংবাদ পেয়ে থাকে।

তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে দুঃসংবাদে আলহামদুলিল্লাহ বলার ফলেও আল্লাহ তাআলা অনেক বড় কিছু উপহার দিয়েছেন।

উদাহরণসরূপ ঘটনাটি হচ্ছে মুসা নবীর ঘটনা এবং এই ঘটনাটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ আলহামদুলিল্লাহ জন্য। সেই সময় মুসাা নবীর এলাকায় অনেক বেশি খড়া দেখা দিয়েছিল এবং এই সময় একটি ব্যাঙ মুসা নবীকে আল্লাহ তাআলার কাছে বৃষ্টি কবে হবে তা জানতে চেয়েছিল।

মুসা নবী তখন আল্লাহর নিকট জিজ্ঞাসা করেছিল ইয়া আল্লাহ আপনি কতদিন পর পানি বর্ষণ করবেন।

এর উত্তরে আল্লাহ তাআলা বলেছিল আগামী ১০০ বছরের মধ্যে কোন পানি তোমরা দেখতে পারবেনা এবং পানি বর্ষণ করা হবে না।

ব্যাঙ যখন একথাটি জানতে পারে তখন তৎক্ষণাৎ ব্যাঙটি আলহামদুলিল্লাহ বলে এবং আলহামদুলিল্লাহ বলার জন্য আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট হওয়ায় দ্রুত পানি বর্ষণ করে ফেলে। তাহলে বুঝতে পারলেন আলহামদুলিল্লাহ ফজিলত কতটুকু কেননা, যেখানে আল্লাহ তাআলার পানি বর্ষণ হওয়ার কোন ইচ্ছা ছিল না সেখানেও আল্লাহ তাআলা পানি বর্ষণ করেছিল।

আলহামদুলিল্লাহ বলার ফজিলত হচ্ছে অনেক বেশি এবং অবশ্যই আমাদেরকে সুসংবাদ কিংবা দুঃসংবাদ উভয় স্থানে আলহামদুলিল্লাহ পাঠ করা উচিত।

কেননা মহান রব্বুল আলামীন আমাদের জন্য যা করেন সব মঙ্গলের জন্য করেন এবং তার হাতে আমাদের মঙ্গল নিহিত থাকে।

আমরা অনেকেই আছি যারা আলহামদুলিল্লাহ বলা নিয়ে অত বেশি অভ্যস্ত নই, তাই আপনাকে আমাকে এই কথাটি বলার অভ্যাস করতে হবে।

প্রতিটি ওয়াক্তের ফরজ নামাজের পর আলহামদুলিল্লাহ পাঠ করার একটি বিশেষ আমল রয়েছে যা আমাদের জানা উচিত।

আলহামদুলিল্লাহ বলার ফজিলত

আমরা সাধারণত আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করার উদ্দেশ্যে আলহামদুলিল্লাহ তেলাওয়াত করে থাকি।

আলহামদুলিল্লাহ তেলাওয়াত করার মাধ্যমে রয়েছে অনেক বেশি ফজিলত এবং এই ফজিলত গুলো আমাদের জানা উচিত।

আলহামদুলিল্লাহ বলার ফজিলত
আলহামদুলিল্লাহ বলার ফজিলত

যখন কোন বিষয়ের ফজিলত জানব তখন সে আমলটি করতে অনেক বেশি উৎসাহিত হব এবং মনোযোগ সহকারে সে আমলটি করতে চাইবো।

নিচে মোট সাতটি আলহামদুলিল্লাহ বলার ফজিলত উল্লেখ করা হলো:

১.) আলহামদুলিল্লাহ পাঠ করার ফলে আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট হয়ে আরো ভালো করে দিবে আমাদেরকে দয়া করে।

(সুস্থ থাকলে আরো বেশি সুস্থতা প্রদান করবে, অসুস্থ থাকলে সুস্থতা প্রদান করবে, সম্পদ বৃদ্ধি করবে ইত্যাদি)।

২.) রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন সর্বোত্তম জিকির হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং সর্বউত্তম দোয়া হলো আলহামদুলিল্লাহ দোয়া।

আর সর্বোত্তম দোয়া হওয়ার কারণে এর ফজিলত কতটুকু হবে তা ধারণা করে ফেলুন, রাসূলুল্লাহ (স.) এর বাণী দিয়ে।

৩.) আর এক হাদিস থেকে পাওয়া যায়, কেয়ামতের দিন সবচেয়ে বেশি উত্তম হবে ওই ব্যক্তি যে সর্বদা আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করত অর্থাৎ আলহামদুলিল্লাহ তেলাওয়াত করত।

৪.) আর এক হাদিসে বলা হয়েছে, জান্নাতে ঐ সকল ব্যক্তিদেরকে সর্বপ্রথম ডাকা হবে যারা সুখে দুঃখে, বিপদে-আপদে সর্বাপেক্ষা সময় আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করেছিল অর্থাৎ আলহামদুলিল্লাহ পাঠ করেছিল।

৫.) রসুলুল্লাহ (স.) হতে বর্ণিত, মিজানের পাল্লা ভারী করতে এবং মিজানের পাল্লা ভরপুর করে ফেলতে আলহামদুলিল্লাহ পাঠ করা উচিত।

৬.) আল্লাহ তাআলার নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় শব্দ হলো চারটি, যেকোনো একটি দ্বারা তুমি শুরু করতে পারো ১.) সুবহানাল্লাহ, ২.) আলহামদুলিল্লাহ, ৩.) লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ৪.) আল্লাহু আকবার।

৭.) আলহামদুলিল্লাহ সকালে, বিকেলে ১০০ বার তেলাওয়াতে ১০০ উট সর্বোচ্চ যত মাল পরিবহন করতে পারবে সে পরিমাণ সদকা সওয়াব দিবে।

তাহলে বুঝতেই তো পারলেন আলহামদুলিল্লাহ তেলাওয়াত করার ফলে দুনিয়াতেও যেমন আপনি আমি প্রশংসনীয় হতে পারবো।

ঠিক তেমনি কেয়ামতের দিন আমাদের নেকির পালা ভারী হয়ে যাবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য আমাদেরকে প্রথমে রাখা হবে।

আলহামদুলিল্লাহ কখন বলতে হয়

আলহামদুলিল্লাহ শব্দের অর্থ কি এবং আলহামদুলিল্লাহ বলার ফজিলত সম্পর্কে আমরা পূর্বে অবগত হয়েছি এবং আমরা জানব কখন আলহামদুলিল্লাহ বলতে পারব বা বলতে হবে।

আসলে মূল কথা হলো আলহামদুলিল্লাহ বলার বাধ্যবাধকতা নেই, যে ঠিক এই সময়ে বলতে হবে আর এই সময় বলতে হবে না।

আপনি যখন ইচ্ছা তখন আলহামদুলিল্লাহ বলতে পারেন এবং আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করতে পারেন।

তবে আলহামদুলিল্লাহ বলার বেশ কিছু আমল রয়েছে যেগুলো করলে আমাদের নফল ইবাদত অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠবে।

এই নফল ইবাদতগুলো হবে অনেক বেশি উপকারী আমাদের জন্য কেননা, এই আমলগুলো করার ফলে আমাদের মিজানের পাল্লা ভারী হয়ে যাবে।

প্রথমত সকালে ১০০ বার এবং বিকালে ১০০ বার কোন বান্দা যদি নফল ইবাদত হিসেবে এবং জিকির অনুযায়ী আলহামদুলিল্লাহ তেলাওয়াত করে তাহলে প্রতিনিয়ত, তার আমলনামায় 100 উট বহনকারী পণ্য সমপরিমাণ যাকাত প্রদান করার সওয়াব পাবে।

দ্বিতীয় তো কোন ব্যক্তি যদি প্রতি ওয়াক্তে ফরজ নামাজের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পাঠ করে, তাহলে তার আমলনামায় অনেক বেশি সওয়াব লেখা হয়।

তৃতীয়ত কোন ব্যক্তি যদি সুসংবাদ পাওয়ার পর আলহামদুলিল্লাহ পাঠ করে তাহলে তার পাওয়া সুসংবাদ থেকে আরও বেশি বৃদ্ধি করে দেয়।

চতুর্থ নম্বরে কোন ব্যক্তি যদি দুঃসংবাদ পাওয়ার পর বা খারাপ অবস্থা সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর আলহামদুলিল্লাহ তেলাওয়াত করে।

আর বান্দার জন্য যদি কোন মঙ্গল হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা তাকে মঙ্গল প্রদান করে।

সর্বদা কেউ যদি আপনাকে ভালো মন্দ জিজ্ঞাসা করে তাহলে সেখানে, আলহামদুলিল্লাহ তেলাওয়াত করা এবং আল্লাহ তাআলার প্রশংসা অনুযায়ী নিজেকে ভালো এবং মন্দ অবস্থা সম্পর্কে অন্যকে জানানো। ইহাতেও রয়েছে অশেষ রহমত ফজিলত যা আল্লাহ থেকে প্রেরিত হবে।

এক কথায় বলতে গেলে আপনি যখন ইচ্ছা তখন আলহামদুলিল্লাহ তেলাওয়াত করতে পারেন এবং আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করতে পারেন।

কোন বান্দা যদি আল্লাহ তায়ালা শুকরিয়া আদায় করে তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাকে সকল নেয়ামতের বৃদ্ধি প্রদান করে।

শেষ কথা

আলহামদুলিল্লাহ অর্থ কি, আলহামদুলিল্লাহ বলার ফজিলত এবং কখন আমাদেরকে আলহামদুলিল্লাহ পড়তে হবে এ বিষয়ে অবগত হওয়ার পর আমি আশা করে আপনাকে আলহামদুলিল্লাহ বিষয়ে অন্য কিছু জানতে হবে।

শুধুমাত্র এইটুকু জ্ঞান অর্জন করার মাধ্যমে আপনি আপনার আমল করার ওপর বেশি মনোযোগী হতে পারবেন এবং আলহামদুলিল্লাহ বেশি বেশি করে তেলাওয়াত করতে চাইবেন। আলহামদুলিল্লাহ পাঠ করার মধ্যে রয়েছে অনেক বেশি ফজিলত এবং আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি।

আমরা যাবতীয় ইবাদত করে কেবলমাত্র আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্টি আঁধার জন্য এবং এক্ষেত্রে আলহামদুলিল্লাহ অবশ্যই শ্রেষ্ঠ দোয়া ও ইবাদত।

কেননা ইহার দ্বারা আমরা আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করার জন্য তিনার প্রশংসা করে থাকে এবং ইহার দ্বারা অবশ্যই তিনি খুশি হন।

তাই আপনিও যদি মনোযোগ সহকারে আপনার আমল করতে চান এবং আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্টি আদায় করতে চান তাহলে অবশ্যই আলহামদুলিল্লাহ ফজিলত আপনাকে জানা উচিত।

শুভকামনা নিয়ে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি দেখা হচ্ছে অন্য কোন পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে।

আরও পড়ুন: ফি আমানিল্লাহ অর্থ কি?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top