আয়নীকরণ শক্তি কাকে বলে? তড়িৎ আয়নীকরণ শক্তির উপর নিয়ামকের প্রভাব

আয়নীকরণ শক্তি কাকে বলে: কোন গ্যাসীয় বিচ্ছিন্ন মৌলের সর্ববহিস্থ শক্তিস্তর হতে একটি করে এক মোল পরমাণু থেকে এক মোল ইলেকট্রন অপসারণ করতে যে পরিমাণ শক্তি খরচ হয় তার পরিমাণকে ঐ মৌলের আয়নিকরণ শক্তি বলে।

আয়নীকরণ শক্তি হলো একটি পর্যায়বৃত্ত ধর্ম। অর্থাৎ পর্যায়ের ক্রমবিন্যাস অনুযায়ী এ ধর্মের বা এই আয়নিকরণ শক্তির পরিবর্তন হয়।পর্যায়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে এই  আয়নীকরণ শক্তির মান আবর্তিত হয়।

আমরা জানি, যে একই পর্যায়ের মধ্যে বামের মৌলের পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বেশি ডানের মৌলের তুলনায়। আর ডানের মৌলের পরমাণুর ব্যাসার্ধ কম বামের মৌলের তুলনায়। অর্থাৎ একই পর্যায়ের মধ্যে ডান দিকের মৌলসমূহের পারমাণবিক ব্যাসার্ধ  কম আর বাম দিকের মৌলসমূহের পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বেশি।

আয়নীকরণ শক্তি কাকে বলে
আয়নীকরণ শক্তি কাকে বলে?

আর পর্যায় সারনির উপর থেকে নিচের দিকে আসলে উপরের মৌলসমূহের  পারমাণবিক ব্যাসার্ধ কম এবং নিচের মৌলসমূহের পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বেশি।

আর পারমাণবিক ব্যাসার্ধের মান কমলে  আয়নীকরণ শক্তির মান বাড়ে ও  পারমাণবিক ব্যাসার্ধের মান বাড়লে আয়নীকরণ শক্তির মান কমে। 

উদাহরণ: গ্রুপ 1: এর  Li, Na, K, Rb, Cs, Fr এ সকল ক্ষার ধাতু  সমূহের মধ্যে  Li এর পারমাণবিক ব্যাসার্ধ সবচেয়ে কম  আর এই কারণেই Li এর আয়নিকরণ শক্তির মান সবচেয়ে বেশি। কেননা লিথিয়াম হলো পর্যায় সারণির বাম দিকের মৌল আর এটি সবচেয়ে উপরের মৌল তাই এর পারমাণবিক ব্যাসার্ধ সবচেয়ে কম।

আবার, Na, Mg, SI, Al, এদের  ভিতরে Si এর আয়নীকরণ শক্তির মান সবচেয়ে বেশি।

কেননা এই Si  পরমাণুটি পর্যায় সারণির ডান দিকে অবস্থিত যার কারণে এই পরমাণুটির আকার আগের পরমাণুগুলোর তুলনায় একটু কম।

আর আমরা জানি যে,  পরমাণুর আকার কমলে আয়নীকরণ শক্তির মান বাড়ে আর পরমাণুর আকার বাড়লে আয়নীকরণ শক্তির মান কমে।

যেহেতু Si  পরমাণুর পারমাণবিক আকার কম তাই এই পরমাণুর আয়নীকরণ শক্তির মান বেশি ।

আর পক্ষান্তরে ঐ সকল পরমাণু সমূহের ভিতরে Na  পরমাণুর আকার  বা পারমাণবিক ব্যাসার্ধ সবচেয়ে বেশি তাই ঐ Na  পরমাণুর আয়নীকরণ শক্তির মান সবচেয়ে কম। Na পরমাণুর আকার সবচেয়ে বেশি কারণ এই পরমাণুটি পর্যায় সারণির ডান দিকে অবস্থিত।

আয়নীকরণ শক্তির উপর নিয়ামকের প্রভাব

নিয়ামকের প্রভাবের কারণে আয়নীকরণ শক্তির মানের পরিবর্তন হয়ে থাকে। আর একেই বলা হয় আয়নীকরণ শক্তির ওপর নিয়ামকের প্রভাব।

এক কথায় বলতে গেলে যে সকল কারণে আয়নিকরণ শক্তির মান পরিবর্তন হয় তাদেরকে  নিয়ামক বলে।

আয়নীকরণ শক্তির উপর নিয়ামকের প্রভাব দুটি। এগুলো হলোঃ

  1. পারমাণবিক ব্যাসার্ধ অথবা পারমাণবিক আকার।
  2. পরমাণুর মধ্যে ইলেকট্রন চার্জের পরিমান।

পারমাণবিক ব্যাসার্ধ অথবা পারমাণবিক আকার

আয়নীকরণ শক্তির মানের পরিবর্তন হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হলো পারমাণবিক আকার। পূর্বে জেনেছি যে পারমাণবিক আকার বৃদ্ধি পেলে আয়নীকরণ শক্তির মান হ্রাস পায় ও পারমাণবিক আকার হ্রাস পেলে আয়নীকরণ শক্তির মান বৃদ্ধি পায়।

তাই এটি প্রমাণিত হয় যে পারমাণবিক আকার হলো আয়নীকরণ শক্তির মান পরিবর্তনের জন্য একটি বড় নিয়ামক। পারমাণবিক আকার বেশি হওয়ার ফলে এদের মধ্যকার  ইলেকট্রনের  সাথে প্রোটনের মধ্যে আকর্ষণ জনিত বল কমে যায় এবং এর ফলে আয়নীকরণ শক্তির মান হ্রাস পায়।

আর এর বিপরীত পার্শ্বে পারমাণবিক আকার ছোট হলে এদের মধ্যকার  ইলেকট্রন প্রোটনের মধ্যে আকর্ষণ বল বৃদ্ধি পায় এবং আকর্ষণ বল বৃদ্ধির ফলে আয়নীকরণ শক্তির মান বৃদ্ধি পায়।

পারমাণবিক ব্যাসার্ধ হলো তড়িৎ ঋণাত্মকতার একটি অনেক বড় নিয়ামক, যার মাধ্যমে কোন মৌলের আয়নীকরণ শক্তির মান হ্রাস বা বৃদ্ধি পায়।

পরমাণুর মধ্যে ইলেকট্রন চার্জের পরিমান

আয়নীকরণ শক্তির মান পরিবর্তন হওয়ার ক্ষেত্রে পরমাণুর ইলেকট্রনের চার্জও নিয়ামক হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে।

কোন মৌলের মধ্যে যতগুলো ইলেকট্রন থাকে ঐ পরমাণুর নিউক্লিয়াসের মধ্যেও ঠিক তার সমান সংখ্যক পরিমাণ প্রোটন থাকে।

পরমাণুর ভিতরের ইলেকট্রন ও প্রোটন সংখ্যার বৃদ্ধির ফলে এদের মধ্যকার আকর্ষণ বল বৃদ্ধি পায়।

অন্যদিকে পরমাণুতে উপস্থিত ইলেকট্রন ও প্রোটন সমূহ পরস্পরকে তড়িৎ চুম্বকীয় বল দ্বারা আকর্ষণ করে।

আর এই কারণে পরমাণুর আকার হ্রাস বা বৃদ্ধি পায় আর পরমাণুর আকার আকার হ্রাস পাওয়ার ফলে আয়নীকরণ শক্তির মান বৃদ্ধি পায়। 

আর তাই বলা যায় যে পরমাণুর ইলেকট্রনের চার্জ হচ্ছে আয়নীকরণ  শক্তির একটি  নিয়ামক।

আয়নীকরণ শক্তির গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য

আয়নীকরণ শক্তির গুরুত্ব এবং অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ রসায়ন গবেষণা করার  জন্য।

তাই আমরা এখন প্রথমে জেনে নেই আয়নীকরণ শক্তির গুরুত্ব কত বেশি এবং তারপর আমরা জানব যে আয়নীকরণ শক্তির বৈশিষ্ট্য কি কি?

যদি আয়নীকরণ শক্তি কাকে বলে এই বিষয়ে সম্পূর্ণ আলোকপাত করতে গেলে আমাদেরকে এর গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে হবে।

১.) আয়নীকরণ শক্তির গুরুত্ব

  • কোনো মৌলের পারমাণবিক ব্যাসার্ধ কত অর্থাৎ কার চেয়ে কার কতটুকু কম বা কার চেয়ে কার কতটুকু বেশি তা জানা যায়।
  • মৌলের পারমাণবিক সংখ্যার উপর নির্ভর করে আয়নীকরণ শক্তির মান নির্ণয় করা যায়।
  • মৌলের মধ্যে উপস্থিত  পরমাণু সমূহের আকর্ষণ শক্তি কত বেশি সে সম্পর্কে জানা যায়।
  •  যদি দুইটি পরমাণু  পরস্পরের সাথে বিক্রিয়া  করে তাহলে কত বেশি শক্তি প্রয়োজন হবে তা  সম্পর্কে জানা যায়।
  • আবার কোন  মৌলকে কতটুকু  পরিমাণ শক্তি প্রদান  করা হলে বন্ধনে  আকর্ষণ করা যাবে তা  বুঝা যায়।

২.) আয়নীকরণ শক্তির বৈশিষ্ট্য

  • আয়নীকরণ শক্তির শুধুমাত্র আয়নীকরণ শক্তির আবদ্ধ পরমাণুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
  • আয়নীকরণ শক্তির মান মৌল সমূহের আকার  এবং ব্যাসার্ধের উপর নির্ভর করে।
  •  আয়নীকরণ শক্তির জন্য অবশ্যই দুটি পরমাণুর প্রয়োজন হয় এর মান বের করার জন্য।

আরও পড়ুন: তড়িৎ ঋণাত্মকতা কাকে বলে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!