আয়নিক বন্ধন কাকে বলে: ক্যাটায়ন এবং অ্যানায়নের মধ্যে যে শক্তিশালী বন্ধন গঠিত হয় তাকে আয়নিক বন্ধন বলে। যে স্থির বৈদ্যুতিক আকর্ষণের কারণে ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে তাকে আয়নিক বন্ধন বা তড়িৎযোজী বন্ধন বলে বলে।
তড়িৎযোজী বন্ধন বা আয়নিক বন্ধন স্থির বৈদ্যুতিক আকর্ষণ শক্তির কারনে হয় থাকে এবং এখানে অবশ্যই ক্যাটায়ন ও আনয়ন আয়ন যুক্ত হয়। যার কারণে এই আয়নিক বন্ধন অনেক শক্তিশালী হয়। আয়নিক বন্ধন ভাঙতে উচ্চশক্তির প্রয়োজন পড়ে।
আর আয়নিক বন্ধনে আবদ্ধ যৌগ সমূহের গলনাঙ্ক উচ্চ হয়ে থাকে কারণ এরা স্থির বৈদ্যুতিক আকর্ষণ শক্তির মাধ্যমে যুক্ত থাকে। তাই আয়নিকবন্ধনে আবদ্ধ যৌগ সমূহকে সহজে একে অপরের থেকে আলাদা করা যায় না এবং বিচ্ছিন্ন করতে বন্ধনে শক্তি দিতে হয়ে প্রচুর।
এগুলো তো ছিল আয়নিক বন্ধনের সংজ্ঞা সহ বিশেষ কিছু ধারণা তবে আমরা আরো বিতরগত জিনিস জানব এই আয়নিক বন্ধনে। অর্থাৎ আয়নিক বন্ধনের গঠন কিভাবে হয় এবং গঠনের শর্ত কি সে বিষয়টি এখন আমরা জানবো আয়নিক বন্ধনের।
আয়নিক বন্ধন গঠনের শর্ত
আয়নিক বন্ধন গঠনের তিনটি শর্ত রয়েছে:
১.) নিম্ন আয়নিকরণ শক্তি: আমরা জানি যে প্রত্যেক ধাতুই ইলেকট্রন ত্যাগ করার সময় শক্তি প্রদান করে থাকে।
আর ধাতু সমূহ যদি ইলেকট্রন ত্যাগ না করে তবে কখনো আয়নিক বন্ধন গঠিত হতে পারবে না।
তাই কথাটি স্বাভাবিক যে যার ইলেকট্রন ত্যাগ করতে শক্তি কম লাগবে সেই পরমাণু খুব দ্রুত তার ইলেকট্রন ত্যাগ করতে পারবে।
যেমন:Na এর সর্বশেষ শক্তি স্তরে একটি ইলেকট্রন থাকে যার কারণে এর ইলেকট্রন করা খুবই সহজ এবং শক্তির কম প্রয়োজন হয়।তাই Na একটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে ক্যাটায়নে পরিণত হয়। অর্থাৎ
Na→e–→Na+
২.) উচ্চ ইলেকট্রন আসক্তি
আমরা জানি যে আয়নিক বন্ধন গঠনের জন্য ইলেকট্রন গ্রহণ এবং ইলেকট্রন ত্যাগের প্রয়োজন হয়।
এর জন্য ধাতুসমূহ ইলেকট্রন ত্যাগ করে আর অধাতু সময় ইলেকট্রন গ্রহণ করে।
ইলেকট্রন গ্রহণ করবে যেহেতু তাই তার ইলেকট্রন আসক্তি উচ্চ হতে হবে। কোন পরমাণুর ইলেকট্রন আসক্তি যদি উচ্চ না হয় তাহলে সেই পরমানু অন্য পরমাণু হতে ইলেকট্রন গ্রহণ করতে পারবে না। ইলেকট্রনের গ্রহণের জন্য অবশ্যই উচ্চ ইলেকট্রন আসক্তির প্রয়োজন পড়বে।
যেমন: Cl এর সর্বশেষ শক্তি স্তরে সাতটি ইলেকট্রন থাকে। আর অষ্টক পূরণের জন্য এর একটি ইলেকট্রনের প্রয়োজন।
আর সর্বশেষ শক্তিশালী সাতটি ইলেকট্রন থাকা এর ইলেকট্রন আসক্তির মান বেশি।
তাই এই পোলোরিন পরমানু সর্বশেষ শক্তি স্তরে একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করার মাধ্যমে Cl– আয়নে পরিণত হবে। অর্থাৎ
Cl→e–→Cl–
৩.) উচ্চ ল্যাটিস শক্তি
আমরা জানি যে যখন আয়নিক বন্ধন গঠিত হয় তখন ভিন্ন ধর্মে দুটি পরমাণুর সংযুক্তির কারণে এটি ঘটে।
এর একটি পরমাণু ধাতু আর অন্যটি হয় অধাতু।
আর আয়নিক বন্ধন গঠনের জন্য যুক্ত পরমাণুকে অবশ্যই উচ্চ ল্যাটিস শক্তি সম্পন্ন হতে হবে।
আয়নিক বন্ধনের বৈশিষ্ট্য
আয়নিক বন্ধন কিছু বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত করে এবং এ বৈশিষ্ট্য গুলো যখন আয়নিক বন্ধন গঠন হয় তখন আমরা দেখতে পাই। তাই আমরা অনেক বন্ধনের আরেকটু বেশি ধারণা অর্জন করার জন্য চলুন আয়নিক বন্ধনের বৈশিষ্ট্য গুলো দেখি।
নিচে উল্লেখযোগ্য কিছু আয়নিক বন্ধনের বৈশিষ্ট্য সমূহ উল্লেখ করা হলো:
- ইলেকট্রনের আদান-প্রদানের কারণে আয়নিক বন্ধন গঠিত হয়।
- আয়নিক বন্ধন স্থির বৈদ্যুতিক আকর্ষণ বলের কারণে হয়ে থাকে।
- আয়নিক বন্ধনের যৌগসমূহ পানিতে দ্রবীভূত হয়।
- এরা বিদ্যুৎ পরিবহন করে থাকে।
- এদের মধ্যবর্তী আন্তঃ আণবিক আকর্ষণ শক্তির মান বেশি হয়ে থাকে।
- এদের মধ্যবর্তী দূরত্ব কম হয়ে থাকে।
এগুলো ছিল আয়নিক বন্ধনের কিছু বৈশিষ্ট্য এবং যখন কোন ক্যাটায়ন এবং অ্যানায়ন যুক্ত হয় তখন এই বৈশিষ্ট্য গুলো দেখা যায়। আর আয়নিক বন্ধন কাকে বলে এর সহজ উত্তর হলো ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নে যুক্ত বন্ধন হচ্ছে আয়নিক বন্ধন।
আরও পড়ুন: অ্যানায়ন কাকে বলে?