আমানত কী: কোন ব্যক্তির নিকট কোন অর্থ বা সম্পদ এবং কথা বর্ষিত রাখার নামই হচ্ছে আমানত। আমানত বলতে সাধারণ অর্থে গচ্ছিত রাখা এবং নিরাপদে রাখা এই দুই অবস্থাকে বুঝানো হয়ে থাকে।
আমানতের রক্ষা করা ইসলামের শরীয়তের দৃষ্টিতে অনেক বেশি মর্যাদা সম্পন্ন কাজ। আমানতের বিপরীত কাজ হলো খিয়ানত করা এবং এটি হচ্ছে একটি জঘন্যতম কাজ ও পাপ।
একজনের জীবন রক্ষা করা, জিনিসপত্র ও আসবাবপত্র রক্ষা করা, সম্মান রক্ষা করা এবং কথাবার্তা প্রতিজ্ঞা সহ সবকিছু অন্যের নিকট আমানত হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে।
যিনি আমানত রক্ষা করেন অর্থাৎ গচ্ছিত সম্পদ যথাযথভাবে সংরক্ষণ করার মাধ্যমে প্রকৃত মালিকের নিকট যথাযথভাবে কোন রকম পরিবর্তন ছাড়াই ফিরিয়ে দিয়ে থাকে আমিন বা আমানতদার বলে।
আমানত কাকে বলে?
আমানত কাকে বলে: অন্য কারো নিকট নিজের সম্পদ এবং কথা নিরাপদে রাখা অথবা গচ্ছিত রাখাকে আমানত বলা হয়।
ব্যাপক অর্থে শুধুমাত্র ধন সম্পদ এবং কথাবার্তা নয় বরং যেকোনো ধরনের জিনিস গুছিত ও নিরাপদে রাখার প্রক্রিয়াকে আমানত বলে।
ইসলামে আমানত হচ্ছে মর্যাদা সম্পন্ন কাজ এবং আমানতের বিপরীত হচ্ছে খিয়ানত করা। ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে খেয়ানত শব্দের অর্থ আত্মসাৎ করা, অতি সাধন করা অথবা ভঙ্গ করা।
ইসলাম অনুযায়ী আমানত হিসেবে যেকোনো ধরনের দ্রব্য বা বিষয় গ্রহণ করার মাধ্যমে যথাযথভাবে প্রকৃত মালিকের নিকট ফিরিয়ে না দিয়ে আত্মসাৎ করার প্রক্রিয়াকে আমানতের খিয়ানত বলা হয়। যে সকল ব্যক্তিগণ আমানতের খিয়ানতের সঙ্গে যথাযথভাবে জড়িত সেই সকল ব্যক্তিগণকে খিয়ানতকারী বা খায়িন নামে ডাকা হয়।
আমানত অর্থ কি?
আমানত অর্থ কি: আমানত আরবি শব্দ, আমানত শব্দের আভিধানিক অর্থ গচ্ছিত রাখা অথবা নিরাপদে রাখা অথবা যথাযথভাবে রক্ষা করা ইত্যাদি।
এখানে আমানত বলতে গচ্ছিত রাখা বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায়, যেখানে কোনো রূপ পরিবর্তন ছাড়াই বিষয়বস্তু মূল মালিকের নিকট পৌঁছে দেওয়া হয়।
ইসলাম আমানতকারী ব্যক্তিকে অনেক বেশি সম্মান প্রদান করে এবং খেয়ানতকারী ব্যক্তিকে অনেক বেশি লজ্জিত করে থাকে।
আমানতের খিয়ানতকারী ব্যক্তিগণ দুনিয়া এবং আখিরাত উভয় স্থানে লাঞ্ছিত ও লজ্জিত হয়ে থাকে অন্যদিকে, আমানত রক্ষাকারী ব্যক্তিগণ উভয় জীবনে সম্মান লাভ করে। ইসলামে আমানতের খিয়ানত করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ এবং হারাম বলে অভিহিত করা হয়েছে। আমানতের খিয়ানত করা এবং আত্মসাৎ করা একই কথা যেখানে, আত্মসাৎ করা বলতে হারামকে বোঝানো হয়।
আমানত রক্ষার গুরুত্ব সমূহ উল্লেখ কর
ইসলামে আমানত রক্ষা করা এবং আমানতের খেয়ানত না করা আখলাকে হামিদার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক। সচ্চরিত্র ব্যক্তির মধ্যে আমদানি আমানতদারী বিশেষভাবে বিদ্যমান থাকে এবং ইহার মাধ্যমে সচ্চরিত্র ফুটে ওঠে।।
আমানত রক্ষা নিয়ে আল্লাহ তাআলা দিক নির্দেশনা হিসেবে বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিচ্ছেন আমানত সমূহ তোমরা যথাযথভাবে সঠিক মালিকের নিকট প্রদান কর।
আমানত রক্ষা করা মমিন এবং মুসলমানদের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং আবশ্যিক কাজ।
প্রকৃত মোমিন ব্যক্তির কাজ হতে কখনোই আমানতের খেয়ানত লক্ষ্য করা যায় না এবং এমন কাজ করেও না।
আমানত রক্ষা করা ঈমানের অঙ্গ এবং ঈমান ইসলামের সঙ্গে কত বেশি মিল রয়েছে তা বুঝানোর কোন দরকার নেই।
কেননা এ বিষয়ে আমরা সকলে অবগত যে ঈমান ছাড়া ইসলাম অচল হয়ে পড়ে আমাদের মাঝে।
অন্যদিকে আমানতের খিয়ানত করা হচ্ছে মুনাফিকের অন্তর্গত এবং মুনাফিক প্রকাশের একটি সংকেত বা চিহ্ন।
আমাদের প্রিয় নবী নিজের ছিলেন আমানত কারী এবং আমানতদারের মূর্ত প্রতীক, যিনার নিকট বড় বড় শত্রুরাও এসে আমানত দিয়ে যেত।
আমাদের প্রিয় নবীকে বলা হত আমিন বা বিশ্বাসের তথা আমানতদার নামে ডাকার সমানুপাতিক বা সমান।
এমনকি মক্কায় হিজরতের সময় কাফেরগণ যখন তিনাকে হত্যা করতে বের হয় তখনও আমানতের কথা ভুলেননি এবং যথাযথভাবে তা পালন করেছিলেন।
তিনি আমাদের কে তাদের গচ্ছিত সম্পদ প্রকৃত মালিকের ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা পরিচালনা করেছিলেন এবং দিক নির্দেশনা দেখিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন যথাযথভাবে।
আমানতের রক্ষার গুরুত্ব নিচে উল্লেখ করা হলো:
- আমানত রক্ষা করার ফলে প্রকৃত মুমিন এবং মুসলমান হওয়া যায় এবং ঈমান আনা যায়।
- যেহেতু খেয়ানত করা সম্পূর্ণরূপে হারাম তাই আমানত রক্ষা করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
- আমানত রক্ষা করার ফলে দুনিয়া এবং আখিরাত উভয় জীবনে সম্মান ও মর্যাদা লাভ করা যায়।
- তাই আমাদেরকে আমানত রক্ষা করতে হবে কেননা, আমারও তো রক্ষা কারীর ওপর আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট।
- ইসলামের জীবন দর্শনে জান্নাত কামনা ও লাভের উদ্দেশ্যে আমানত রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ।
- আমানত রক্ষাকারী ব্যক্তিদেরকে আল্লাহ তা’আলা বিশেষ পুরস্কার ভূষিত করতে পারেন সেই কঠোর কিয়ামতের দিন।
- পার্থের জীবনে আমানত মানুষের সুখ শান্তি ফিরিয়ে আনে এবং খিয়ানত বিপর্যয় ডেকে আনে।
- আমানত সচ্ছলতা সম্পূর্ণ জীবন যাপনের একটি অন্যতম ব্যবস্থা এবং সম্মান লাভের মাধ্যম।
- খিয়ানত মানুষের আত্মা ও বিশ্বাস ভঙ্গ করতে পারে তবে অন্যদিকে আমানত আমাদের বিশ্বাস পরিপূর্ণভাবে বজায় রাখতে পরিচালনা করে।
আমানত রক্ষার ক্ষেত্র কি কি?
আমানত রক্ষার কিছু ক্ষেত্র রয়েছে, যে সকল ক্ষেত্র আমাদেরকে অবশ্যই জানতে হবে আমানত কী নিয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞানের জন্য।
আর তাই আমি অবশ্য চেষ্টা করব আমানতের এই সকল ক্ষেত্রগুলো সম্পর্কে আপনার মাঝে সাধারণ কিছু জ্ঞান প্রদান করার।
যে সকল ক্ষেত্রের দিক বিবেচনা করে আমানতকে আমাদের সংরক্ষণ করতে হয় সঠিকভাবে এবং অক্ষত ভাবে। সেই সকল ক্ষেত্রগুলো নিয়ে আজকের এখানে আলোচনা করা হবে যেন আপনি আমানত সঠিকভাবে পালন করতে পারেন এই সকল ক্ষেত্রগুলো দ্বারা।
- মাতা পিতার নিকট আমানত হচ্ছে তার সন্তান এবং সন্তানকে সুষ্ঠুভাবে প্রতিপালন করা ও শিক্ষা প্রদান করার বিষয়ে আহবান করা হয়েছে।
- সন্তানের নিকট মাতা পিতার আমানত হচ্ছে অনুগত্য করা ও কর্তব্য ও দায়িত্ব পালন করা।
- শিক্ষকের নিকট ছাত্র-ছাত্রীরা আমানত হচ্ছে সুশিক্ষা প্রদান করা ও শিক্ষিত করা।
- ছাত্র-ছাত্রী নিকট আমানত হচ্ছে বিদ্যালয়ের সকল আসবাবপত্র গচ্ছিত ও সুরক্ষিত রাখা।
- কোন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কর্মচারী হচ্ছে ঐ প্রতিষ্ঠানের সকল কিছুর আমানতকারী বা আমানত স্বরূপ।
- খলিফা বা সরকারের নিকট রাষ্ট্রের সকল সম্পদ এবং জনগণের অধিকার রক্ষা করা হচ্ছে আমানত।
- জনগণের নিকট পুরো রাষ্ট্র যেকোনো থেকে কাজের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো হচ্ছে আমানত।
- আমানত একটি মহাগুন এবং এই গুণের মাধ্যমে মানুষ দায়িত্ব ও কর্তব্যশীল হয়ে থাকে।
কেউ যদি আমাদের নিকট কোন জিনিস গচ্ছিত রাখার জন্য দেয় তাহলে তার যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা আমাদের জন্য উচিত হবে।
না এবং তা নিজের কাজে ব্যবহার করা মোটেও উপযোগী নয়।
সম্পদ বাদ দ্রব্যের প্রকৃত মালিক যখন তা ফিরিয়ে চাইবে তখন তা ফিরিয়ে দেওয়া অত্যাবশকীয়। আর এটাই হচ্ছে ইসলামে আমানতের নীতি পদ্ধতি ও ব্যবস্থা পরিচালনা। আমানতের ক্ষেত্র অনেক ব্যাপক কেননা, এক্ষেত্রে শুধুমাত্র ধন-সম্পাদকে আমানত বলে অবহিত করা হয় না।
বরং কথাবাত্রা, কাজকর্ম, দেখাশোনা, মান সম্মান এবং নানা ধরনের অধিকার সহ আমানত গভীরভাবে জড়িত।কেউ কোন কথা বিশ্বাস করে আপনাকে আমাকে বললে, আমাদের নিকট সেই কথা আমানত স্বরূপ হয়ে যাবে। এবং এক্ষেত্রে আমাদের কথাবার্তা সঠিকভাবে বলতে হবে এবং অনুরোধ অনিয়ন্ত্রিত কার্যকলাপ পরিলক্ষিত করা যাবে না।
আমানত নিয়ে শেষ কথা
আমানত কী এই সম্পর্কে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং জ্ঞান দেওয়ার চেষ্টা এই পোস্টে করা হয়েছে। আমরা আশাবাদী আপনারা আমানত নিয়ে অনেক বেশি সচেতন হবেন এবং আত্মসাৎ করা থেকে বিরত থাকবেন।
আমানতের খেয়ানত করা অর্থাৎ আত্মসাৎ করা হচ্ছে মহাপাপ এবং হারামের অন্তর্গত একটি কাজ।
সকল বিষয়ে দৃষ্টিপাত করে আমি আশা করি আপনারা আমানতের উপর সচেতন হবেন।
শুধুমাত্র আমানত রক্ষা করার মাধ্যমে জীবন সমাপ্ত হয়ে যায় না বরং ইসলামের প্রত্যেকটি বিধি-বিধান সঠিক অনুপাতে মেনে চলা প্রয়োজন। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র আল্লাহ তায়ালার অশেষ মেহেরবানী দ্বারা চালিত।
তাই আল্লাহ তায়ালার প্রদত্ত সকল আরাম-আয়েশ গ্রহণ করার মাধ্যমে আমাদেরকে তিনার সকল হুকুম এবং আহকাম মেনে চলা।
আরও পড়ুন: সুবহানাল্লাহ অর্থ কি?