অপারেশন সার্চলাইট কি? অপারেশন সার্চলাইট বলতে কি বুঝায়?

অপারেশন সার্চলাইট কি: অপারেশন সার্চলাইট হলো ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দ্বারা পরিচালিত গণহত্যার নাম। বাংলাদেশের মধ্যে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসন কায়েম রাখার জন্য ২৫ শে মার্চ রাতে যে ঘৃণিত বর্বর গণহত্যা চালানো হয় তা ইতিহাসের ইতিহাসের পাতায়  অপারেশন সার্চলাইট হিসেবে পরিচিত।

এই পঁচিশে মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালির উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।

আর এই রাতেই তারা অনেক বাঙালিকে হত্যা করেছিল।

অপারেশন সার্চলাইট বলতে কি বুঝায়?

পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী কর্তৃক পরিকল্পিত  গণহত্যার মাধ্যমে ১৯৭১ সালের মার্চ ও এর পূর্ববর্তী সময়ের সংঘঠিত বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দমন করতে চেয়েছিল।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এই অপারেশনটির আসল উদ্দেশ্য ছিল ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ এর মধ্যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশের) সকল বড় বড় শহর দখল করে নেওয়া।

অপারেশন সার্চলাইট কি
অপারেশন সার্চলাইট কি

দেশের বুদ্ধিজীবী, বড় বড় নেতৃত্ববৃন্দ, এবং ছাত্র যুবকদের কে নির্মূল করা আর বাঙালি জাতিকে কৃতদাস হিসাবে পরিণত করা।

১৯৭১ সালের মার্চের শুরুতে পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীর এক বৈঠকে ১৪ তম ডিভিশনের ডিসিওসি মেজর জেনারেল খাদিম হুসাইন রাজা 

এবং মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী এই অপারেশনটির মূল পরিকল্পনা তৈরি করেন।

এই পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৫ শে মার্চের পূর্বে বাঙালি ইউনিট সমূহকে বিভক্ত করে বিভিন্ন কাজ দেখিয়ে সেনানিবাসের বাহিরে পাঠানো হয়।

বাঙালি সৈনিকদের নিরস্ত করা হয় এবং বাঙালি কর্মকর্তাদের ছুটিতে পাঠানো হয়।

আর এই কাজগুলো এমন ভাবে সম্পাদন করা হয় যাতে কারো মনে কোন প্রকার সন্দেহের উদ্রেক সৃষ্টি না হয়।

২৫ শে মার্চ রাত দশটার দিকে শুরু হয় সেই ধ্বংসযজ্ঞ আর যদিওবা এটি শুরু হওয়ার কথা ছিল জিরো আওয়ার বা রাত একটার সময় থেকে।

সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে নৃশংসভাবে হত্যাযজ্ঞ চলে রাত থেকে সকাল পর্যুন্ত।

এই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষকসহ জহরুল হক হলের প্রায় ২০০ জন ছাত্রকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়ছিল।

আমেরিকান ডিপ্লোমেট আর্চার কে ব্লাড এর লেখা বই {The Cruel Birth of Bangladesh} থেকে জানা যায় সেই রাতে রোকেয়া ছাত্রী নিবাস হলে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

আর ছাত্রীরা যখন আগুন থেকে বাঁচতে বাইরে বেরিয়ে আসে তখন তাদেরকে গুলি করা হত্যা করা হয়।

আনুমানিক ৩০০ জন ছাত্রীকে সে রাত্রে হত্যা করা হয়েছিল। 

এই রাতে ঢাকার পিলখানা, নীলক্ষেত এলাকা, রাজারবাগ পুলিশ লাইনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।

আর ১৯৭১ সলের ২৫ মার্চ এই রাত্রে শুধু ঢাকার মধ্যেই প্রায় ৫০ হাজার এর মতো নর-নারী নিহত হয়েছিল।

অপারেশন রিডবার্ড

মধ্যরাতে পরিচালিত হয় পাকিস্তানি বাহিনীর স্পর্শকাতর অভিযান অপারেশন বিগবার্ড।গ্রেফতার করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।

আর গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন।

যে কোন মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। এই ভয়াবহ গণহত্যা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটিয়েছিল।

আর এর মাধ্যমে বাঙালিরা দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকেদেরকে বিতাড়িত করার সংগ্রামে লিপ্ত হয়।

এরই পরিণতি হিসেবে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ কমান্ট মিত্রবাহিনীরর কাছ থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বিনা শর্তে আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যা আজ পর্যুন্ত স্বাধীন হিসাবে পৃথিবীর বুকে চির উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top