অতি পুষ্টি কাকে বলে? অতি পুষ্টির সংজ্ঞা, লক্ষণ, প্রকারভেদ ও ক্ষতিকর প্রভাব

অতি পুষ্টি কাকে বলে: শরীর অনুযায়ী প্রয়োজনের অধিক খাবার গ্রহণ করার মাধ্যমে দেহের মধ্যে যে অতিরিক্ত পুষ্টি উৎপাদন হয় এবং তা সঞ্চয় হয় থাকে একে অতি পুষ্টি বলে। এককথায় অতি পুষ্টির সংজ্ঞা, কোন কারণে শরীরের মধ্যে যদি প্রয়োজনের চেয়ে প্রায় তিন চার গুণ বেশি পুষ্টি উৎপাদন হয় একে অতি পুষ্টি বলে।

অতি পুষ্টি বলতে পুষ্টির অত্যাধিক মাত্রাকে বোঝানো হয়ে যায় স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। একদিকে জীবন রক্ষা করার ক্ষেত্রে এবং প্রয়োজনীয় শক্তি অর্জনের ক্ষেত্রে পুষ্টি যেমন দরকার হয়। ঠিক তেমনি যখন এ পুষ্টির মাত্রা আমাদের শরীরে বৃদ্ধি পায় তখন আমাদের নানা প্রকার শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।

আবার অতিপুষ্টি হচ্ছে এমন একটি শারীরিক সমস্যা যার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার পার্শ্ববর্তী ক্রিয়া আমাদের শরীরের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়।

অতি পুষ্টি কাকে বলে
অতি পুষ্টি কাকে বলে?

পুষ্টির অত্যাধিক মাত্রা শরীরের মধ্যে আমাদের যখন বৃদ্ধি পায় তখন আমরা তা উপলব্ধি করতে পারি। উপলব্ধি করার এই ক্ষমতাটি প্রাকৃতিকভাবে আমাদের মাঝে বিদ্যমান থাকায় আমরা অতি পুষ্টি সনাক্ত করতে পারে আমাদের শরীরে।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় অতি পুষ্টির কারণে মানুষের এলার্জি এবং হৃদরোগ জনিত বিভিন্ন সমস্যা বৃদ্ধি পায়। আবার পুষ্টির অত্যধিক মাত্রা পরিলক্ষিত হওয়ার ফলে নানা প্রকার প্রতিবন্ধকতা মানুষের শারীরিক গঠনে পরিলক্ষিত হয় বা প্রকাশ পায়।

শরীরে পুষ্টি যেমন প্রয়োজনীয়তা রয়েছে ঠিক তেমনি অত্যাধিক পুষ্টির রয়েছে ক্ষতিকর দিক যা থেকে আমাদের বাঁচতে হবে।

পুষ্টির অত্যাধিক পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে যেমন কিছু কারণ রয়েছে ঠিক এর কিছু প্রতিকার রয়েছে মুক্তি পাওয়ার জন্য।

অতি পুষ্টির লক্ষণ

আমরা যেন প্রত্যেকটি রোগের কিছু না কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায় এবং অতি পুষ্টি একটি রোগ যার কিছু লক্ষণ রয়েছে।

যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পাওয়া মাত্র বুঝতে পারি যে, আমাদের হয়তোবা অতি পুষ্টি জনিত সমস্যা হয়েছে এবং পুষ্টির মাত্রা বেড়ে গেছে।

আর আপনি যেন বুঝতে পারেন যে আপনার অতি পুষ্টি জনিত সমস্যা হয়েছে কিনা সে জন্য লক্ষণ জানতে হবে। যে লক্ষণ গুলো আমি এখানে উল্লেখ করব সেগুলো আপনার লক্ষণের সঙ্গে পার্থক্য করলে বুঝতে পারবেন যে আপনার অতি পুষ্টি হয়েছে কিনা।

নিচে উল্লেখযোগ্য কিছু অতি পুষ্টির লক্ষণ সমূহ উল্লেখ করা হলো:

  • দিন দিন শরীর এর ওজন বৃদ্ধি  পাবে।
  • হজম শক্তি বা পরিপাক শক্তি কমতে থাকবে।
  • শরীরের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের অস্বাভাবিক প্রক্রিয়া লক্ষণ হবে।
  • এক্ষেত্রে আপনার রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে পারে।
  • শরীরের মধ্যে চর্বি জমার মত লক্ষণ দেখা দিবে।
  • হৃৎপিণ্ডে চর্বি জমতে পারে এবং এর ফলে বুকে ব্যথা অনুভব হবে।
  • শরীরের ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে কর্মদক্ষতা কমতে থাকবে।
  • রক্তের মধ্যে গ্লুকোজ এর মত উপাদানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
  • শরীরের মধ্যে গ্যাস্টিকের সমস্যা দেখা দিবে।
  •  কিছু সময় পর পর বা কয়েক দিন পর পর বমি বমি ভাব দেখা দিবে।
  • কিছু সময় পর পর মাথা ব্যথা করবে ও মাথা ঘুরবে, ইত্যাদি।

এগুলো হলো সাধারণ কিছু লক্ষণ যার মাধ্যমে আমরা আমাদের শরীরের অতিপুষ্টের মাত্রা বৃদ্ধির সমস্যা সনাক্ত করতে পারে।

যেহেতু এটি একটি গুরুতর সমস্যা তাই অবশ্যই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করার চেষ্টা করা উচিত।

বর্তমানে পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি হওয়ায় মানুষের মাঝে অতি পুষ্টি দেখা গিয়েছে এমন না বরং প্রত্যেক খাদ্যে আগের মতই পুষ্টি রয়েছে। তবে বর্তমানে মানুষ একটু অনেক বেশি অলস হয়ে পড়েছে এবং এই অলসতার কারণে মূলত অতি পুষ্টির জনিত সমস্যা দেখা দিয়েছে।

অতি পুষ্টির ক্ষতিকর প্রভাব

আমরা তো অতি পুষ্টি সম্পর্কে জানালাম এবং সেই সাথে কিছু লক্ষণ দেখলাম যেগুলোর দ্বারা আমাদের শরীরে প্রকাশ পায় অতীপুষ্টির সমস্যা। তবে এখন প্রশ্ন হচ্ছে অতি পুষ্টি জনিত সমস্যার কারণে আমাদের শরীরে কিরূপ প্রভাব ফেলে বা কিরূপ প্রভাত দেখা যায়।

কেননা যখন আমরা অতিপুষ্টির প্রভাব সম্পর্কে জানতে পারব তখন খুব সহজে সতর্ক হতে পারবো অতিপুষ্টি গ্রহণ থেকে।

মূলত অতি পুষ্টি অযথা হয় না বরং আমাদের অত্যাধিক হারে পুষ্টি গ্রহণ করার ফলে হয়ে যা আমাদের দ্বারা সংঘটিত রোগ।

অবশ্যই অতি পুষ্টি শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর এবং এর ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। নিচে অতি পুষ্টির ক্ষতিকর প্রভাব উল্লেখ করা হলো:

  • রক্তচাপ বৃদ্ধি বা ব্লাড প্রেসার বৃদ্ধি পাবে।
  • প্রসাব করতে গিয়ে জ্বালা যন্ত্রণা অনুভব হবে।
  • অতি পুষ্টির ফলে পাকস্থলী পোঁচা মতো সমস্যা দেখা দিবে।
  • অস্বাভাবিক হারে দেহে চর্বির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।
  • হৃদপিন্ডের আশেপাশে চর্বি জমা হতে শুরু করবে।
  • হার্ট ব্লক বা হৃৎপিণ্ড ব্লক এর মত সমস্যা দেখা দিবে।
  • হার্ট অ্যাটাক এর ঝুঁকি বাড়বে এবং  হার্ড ফেল পর্যন্ত হতে পারে।
  • শরীরের কর্মদক্ষতা অনেক গুণে কমে যাবে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে এবং রোগাক্রান্ত হবে।

অতি পুষ্টি যেহেতু অবশ্যই একটা শারীরিক সমস্যা সুতরাং অবশ্যই এর কিছু না কিছু ক্ষতিকর দিক থাকা উচিত। আর উপরে উল্লেখিত কিছু ক্ষতিকর দিক উল্লেখ করা হয়েছে যার বাইরে আরো অনেক প্রকার ক্ষতিকর দিক রয়েছে যেগুলো উল্লেখ করা হয়নি।

অবশ্যই আপনাকে এই সকল বিষয়ে অবগত হওয়ার মাধ্যমে অতি পুষ্টি থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রয়োজনীয়তা অবলম্বন করতে হবে। কেননা ইহার মাধ্যমে আপনার আমার যেমন শারীরিক সমস্যা দেখা দিবে ঠিক তেমনি দেখা দিবে বিভিন্ন প্রকার শারীরিক সংকট।

অতি পুষ্টির কারণে শারীরিক পুষ্টি বৃদ্ধি পায় এমনটি শুধু না বরং ইহার মাধ্যমে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক উপাদান বিনষ্ট হয়। সুতরাং অবশ্যই এই সকল বিষয়ের উপরে লক্ষ্য রেখে শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য অতি পুষ্টি দূর করার উপায় বা অতি পুষ্টি জন্য না হয় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে।

অতি পুষ্টির প্রকারভেদ

শরীরের মধ্যে পুষ্টির পরিমাণ কতটুকু বৃদ্ধি পেয়েছে এর উপর ভিত্তি করে অতি পুষ্টিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। আর এই সকল প্রকারভেদ অনুযায়ী অতি পুষ্টির তীব্রতা আমাদের শরীরে বৃদ্ধি পায় এবং সেই সাথে প্রভাব বেশি হয়।

প্রকারভেদ গুলো এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে অতি পুষ্টির যা সীমিত মাত্রায় থেকে উচ্চ মাত্রা পর্যন্ত পৌঁছায়। অর্থাৎ প্রাথমিক অবস্থায় যখন সামান্য বৃদ্ধি পায় তখন থেকে শুরু করে যখন তীব্র হয়ে ওঠে সেই সময় পর্যন্ত অতিপুষ্টির প্রকারভেদ বাড়তে থাকে।

অতি পুষ্টির প্রকারভেদ বা তিনটি প্রকারভেদ নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • প্রথম পর্যায়ে অতি পুষ্টি: এ অবস্থায়  রোগীর শুধু ওজন বৃদ্ধি পায় এবং কর্মদক্ষতা কমতে পারে।
  • দ্বিতীয় পর্যায়ে অতি পুষ্টি: এ পর্যায়ে অবস্থিত রোগীর বিপাক প্রক্রিয়া বিঘ্ন ঘটতে পারে এবং অনেক বমি বমি ভাব অনুভব হবে।
  • তৃতীয় পর্যায়ে অতি পুষ্টি: পর্যায়ে রোগীর হৃদপিন্ডে চর্বি জমে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে এবং বিভিন্ন অস্বাভাবিক লক্ষণ শরীরে প্রকাশ পাবে।

এই অতিপুষ্টির যে কিছু প্রকারভেদ রয়েছে সে সম্পর্কে হয়তোবা অধিকাংশ লোক আমরা অবগত ছিলাম না বা জানতাম না।

আর আশা করি আমরা অবশ্যই আপনাকে এর প্রকারভেদ এবং ক্ষতিকর দিক ও লক্ষণ সম্পর্কে অবগত হওয়ার পরিপূর্ণ তথ্য দিতে পেরেছি।

অতি পুষ্টি হচ্ছে শারীরিক একটা সমস্যা এবং অবশ্যই আমাদেরকে এই সমস্যা থেকে বেঁচে থাকার জন্য কিছু না কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অবশ্যই একটি মনে রাখবেন যে অতি পুষ্টি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কেবলমাত্র আপনার হাতে এবং আপনার কর্মকাণ্ডের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে।

এগুলো হলো অতি পুষ্টি কাকে বলে এবং তার প্রভব নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা।

আশা করি অতি পুষ্টির সম্পর্কে আপনাদের পরিপূর্ণ জ্ঞান প্রদান করতে পেরেছি এবং কিছু ধারনা প্রদান করেছি। আপনার যদি আরো অন্য কোন প্রকার সমস্যা থেকে থাকে বা এই পোস্টটি সম্পর্কে আরো কিছু জানতে চান তাহলে কমেন্ট করতে পারেন, ধন্যবাদ অতি পুষ্টি সম্পর্কে জানার জন্য।

আরও পড়ুন: সঠিক নিউজ হোমপেজ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top